বন্ধুদের সাথে কয়েকদিনের Thailand ট্রিপ
হ্যাঁ থাইল্যান্ড ট্রিপটা আমরা অনেক বেশি মিস করছি। দেশটা আমাদের কিছু দিয়েছে কিনা বড় বিষয় নয়, বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কের অন্য এক বাধঁন তৈরী করেছে।
এমনিতেই আমাদের সম্পর্ক একজন আরেকজনের সাথে অনেক নিবিড়, তারপরও এই ট্রিপটা নিজেদের ভেতরকার মানুষটাকে সামনে আনতে সুযোগ হয়েছে।
পিন্টু প্রায় বছরখানেক আগে থেকেই অনুরোধ করছিল, বন্ধুদের নিয়ে দেশের বাইরে একটা ট্যুর দেওয়ার। আমি তাকে পূর্ণ সমর্থন দিলেও আমার কিছু লিগ্যাল সমস্যার কারণে তখনও বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঠিক কিভাবে এই ট্যুর’টা ব্যবস্থাপনা করা যায়।
একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমার লিগ্যাল সমস্যাটা থেকে বার হতে না পারলে এই ট্যুরে না গিয়েও সবাইকে একসাথে করার একটা প্রয়াশ নেয়া যায়।
একটা বড় জাল ফেলার মত, সব কাছের দূরের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ শুরু করলাম। প্রাথমিক দিকে প্রায় সবাই এক পায়ে খাঁড়া, বুঝতে বাকি রইলনা, শেষে গিয়ে হয়তো ৩ জনকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ ট্যুর শুরুর আগে যে উচ্ছাস থাকে, আস্তে আস্তে অনেক সামাজিক, ব্যাক্তিগত প্রতিকূলতা, বাধা পেরিয়ে অনেকে ট্যুরে অংশগ্রহণ করতে পারে না।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_e3b96912d0444dfa82203942e0a90343~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_735,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_e3b96912d0444dfa82203942e0a90343~mv2.jpg)
তারপর চিরুনি অভিযানে নামলাম, আমার টার্গেট ৪-৬ জনের একটা টিম। ২২ জন থেকে একে একে কমতে কমতে ১২ জনে এসে ঠেকলো, আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমার ইউএ.ই’য়ের ভিসার জটিলতাও কেটে গেল। সামনে পূজা, দেশে আসবো কি যে একটা একসাইমেন্ট সাথে এই ট্যুরটা করবো।
আমাদের এই ট্যুরের উদ্যেগক্তা পিন্টু, সবার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখেছে, সবার ছুটি ছাটা থেকে শুরু করে ট্যুরে কতটাকা খরচ হবে। সে যদি না দাড়াঁতো আমাদের এই থাইল্যান্ড ট্যুর কখনো সফল হতো না। থাইল্যান্ড ট্যুরটা প্রথম দিকে ৭-১০ দিনের প্ল্যান থাকলে পরে ৫ দিনের লিমিট করতে হয়েছে, অনেকের ছুটি ছাটার অগ্রহণযোগ্যতার কারণে।
২টা সমস্যাতে এই ট্যুরের প্রধানকে আমাদের হারাতে হল। প্রথমটা পিন্টুর দেরিতে পার্সপোট প্রিন্ট হয়ে আসা, আর দ্বিতীয়টা ওর ভিসা ২ দিন পর রিলিজ করার কারণে। কোন দেশের এম্বেসী শতকরা ১০০ ভাগ গ্যারান্টি দিবে না যে, কোন ব্যাক্তিকে বা প্রতিষ্ঠানকে তারা ভিসা দিবে। যেকোন কারণে তারা তাদের ইচ্ছামত কেন্ডিডেটকে ভিসা ইস্যু করতে দেরি করতেই পারে অথবা ভিসা রিজেক্ট করতে পারে।
আমি আর হাসানের ভিসা দুবাই থেকে ইস্যু করে রাখা ছিল। শুধুমাত্র, পিন্টু, পাবেল, শাওন, মিঠু আর সুমনের ভিসা ঢাকা থেকে ইস্যুর জন্য ফাইল জমা করা হয়েছে অক্টোবরের ১-২ তারিখের দিকে, যদিও এই প্রসেস আরো ২ সপ্তাহ আগে শুরু করার প্রয়োজন ছিল।
আমাদের এজেন্ট ফ্লাইট টিকেট আর আনুষাঙ্গিক সব কিছু ব্যবস্থা করে রাখার কারণে আমরা পিন্টুর জন্য দু’দিন অপেক্ষা করার সুযোগ ছিলনা। অগত্য পিন্টুকে ছাড়াই আমাদের ট্যুর শুরু হল। যদিও শেষ মুহুর্তে আমাদের পরিকল্পনা ছিল ট্যুরটা বাদ দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু পিন্টু নাছোড়বান্দা; জেদের কারণে আমরা সবাই আবার মত পাল্টাতে বাধ্য হই।
যেদিন কক্সবাজার ছাড়ছিলাম ট্যুরের জন্য, মনটা ভিষণ খারাপ ছিল, কারণ যে মানুষটা আমাদের সবাইকে অর্গানাইজ করেছে, সে মানুষটাই ট্যুর থেকে ছিটকে পড়েছে। মিঠুর গিটার, আমার ডিএসএল আর গেল না শুধু পিন্টু না যাওয়াতে। সে আমাদের সাথে ফিজিক্যালি না থাকলেও মনে মনে ছিল শতভাগ।
প্রতিটা সময় মনে হতো, পিন্টু থাকলে এই মুহুর্তে আমরা কি করতাম এই সময়, ও কি বলতো। সত্যি খুব মিস করেছি পুরো ট্যুরটা জুড়ে।
এই লেখার মাঝে মাঝে কিছু টিপস এন্ড ট্রিক থাকবে। যারা গ্রুপ ট্যুরে আগ্রহি তাদের এই বিষয়ে অগ্রিম পরিকল্পনা থাকা জরুরী। মানি ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সাইট সিইং, কিছু কিছু জিনিস অবশ্যই লেখা যাবে না, কারণ এইটা থাইল্যান্ড ট্যুর। দেখা যাবে ভালটা লিখতে গিয়ে পাঠক খারাপটা গ্রহণ করেছে, তাই দায়িত্ব নিয়েই না লেখার চেষ্টা করলাম।
প্রথম দিনের যাত্রা- কক্সবাজার থেকে ঢাকা
সকাল থেকে ব্যাগ গোছানো শুরু, গোসল শেষে সবার সাথে যোগাযোগ মোবাইল ফোনে। সবাই কেমন জানি মন মরা। আমি মিঠুর বাসায় গেলাম, কি অবস্থা জানার জন্য, দেখলাম সে মোটামুটি তৈরী। শাওনকে ফোন করলাম, পাবেলকে সকাল থেকে পেইন দিলাম, সে আগে থেকেই চট্টগ্রামে চলে এসেছে বৌ-বাচ্চাকে সময় দেওয়ার জন্য। আমি, শাওন আর মিঠু যাব কক্সবাজার থেকে, পাবেল চট্টগ্রাম থেকে আমাদের সাথে ঢাকা যাবে, সুমন ঢাকা থেকে আর হাসান দুবাই থেকে থাইল্যান্ডে আমাদের সাথে ট্যুর শুরু করবে।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_d3d769a41a634375bffece11716bf0d4~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_449,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_d3d769a41a634375bffece11716bf0d4~mv2.jpg)
পিন্টুকে ফোন করলাম, ওর মন খারাপ, স্বাভাবিক। দেখা করালাম, কিছুক্ষণ কথা সেরে বাসায় আসলাম কাপড় নিয়ে বের হব। দুপুর ২টা মিঠুর বাসায় পৌঁছালাম, ওকে নিয়ে টমটমে শাওনের বাসা থেকে তাকে উঠায়ে বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে বাসে চট্টগ্রাম, হালকা ঘুম দিয়ে নিলাম, টুকটাক কথা হলো। চট্টগ্রামে এসে পাবেলকে নিয়ে হান্ডিতে গেলাম সবাই। বাস ছাড়তে এখনো ঘন্টা ২ বাকি। আরাম করে খেয়ে দেশ ট্রাভেলের অফিসে অপেক্ষা করছিলাম, সেই গ্যাপে রাসেল এসে দেখা করে গেল।
বাসে উঠতেই বুঝতে পারলাম, এই বাস আমাকে একটু ঘুমানো সুযোগ দিবে। লম্বা করে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নাক ডাকা শুরু। বাকিরা, পরস্পর পরস্পরকে দেখছে আর আমার ঘুমন্ত ছবি আমাদের প্রাইভেট ট্যুর গ্রুপে পোষ্ট করছিল। আমার আবার ঘুম ভাল হয়, বাসে, গাড়িতে। দুবাইতে গাড়ি চালাইতে চালাইতে চোখ বন্ধ হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে আমার নাক ডেকে ঘুমানোটা অস্বাভাবিক না।
সকাল ৪:৪৫, ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এরিয়াতে আমাদের ছেড়ে দেওয়া হল। আমরা প্রথমে ব্রাক লার্নিং সেন্টারে ঢু মেরে দেখলাম যদি একটু রেষ্ট নেওয়া যায়। সুজন কবির অবশ্য আমাদের জন্য বনানীতে হোটেল বুংকি দিয়েছিল, আমরা সিন্ধান্তহীনতার কারণে ঐ সুযোগটা নিতে পারিনি। সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলে মানুষ আবাল আচরণ করে, আমাদেরও ঠিক একই অবস্থা। হাতের থলেগুলো নিয়ে এদিক থেকে ঐদিক, শেষমেষ ২-৩ টা হোটেল দেখে একটাতে উঠে কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
মিঠুর দুষ্টুমির পালা এইখান থেকে শুরু, তার নাকি ঘুম আসছে না। যেটা হল, সে নিজেও ঘুমাচ্ছে না আমাদেরও ঘুমাতে দিচ্ছে না। কতক্ষন এসে হঠাৎ জড়ায় ধরে, কতক্ষন লুঙ্গি ডান্স। আমি এক পশলা ঘুমায় নিয়েছিলাম তাই রক্ষা। পাবেল আর শাওন মাথা ধরে বসে আছে, কারণ তাদের একটুও ঘুম হয়নি।
দ্বিতীয় দিন - ব্যাংককে
সুমন কল করেছে বেশ কয়েকবার, সকাল ৫টার দিকে হোটেলে এসে পৌঁছালো। দুষ্টুমিতে আরেক ধাপ যোগ হল। হালকা স্নান করে সবাই রেডি হয়ে নিলাম, নিচে গিয়ে সবাই নাস্তা করলাম। চোখ জ্বলছে। ব্যাগ গুছিয়ে ৭:৩০ নাগাদ এয়ারপোর্টে রওনা দিলাম। হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট কাছে থাকায় হেঁটেই ঢুকলাম, মাঝে ঘেমে গেলাম ১৫ মিনিটের হাঁটার কারণে।
বোর্ডিং নিয়ে দুষ্টের দল দাঁড়ালো ইমিগ্রেশন লাইনে। ভাল-ভালই সবার ইমিগ্রেশন শেষ করলাম। ফ্লাইটে বসে মিনি ঘুমানোর চেষ্টা চালু রাখলাম, ততক্ষণে খুব ক্লান্তবোধ করছিলাম। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে টেক্সিতে আগেই বুকিং করা হোষ্টেলে উঠলাম।
আমাদের পৌঁছানোর আগেই হাসান হোষ্টেলে পৌঁছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। কাপড় চোপড় ছেড়ে হাঁটতে বের হলাম। আমাদের হোষ্টেলটা ব্যাংককের “সুকিমভিট” এরিয়াতে। এরিয়াটা মোটামুটি পপুলার, বিশেষ করে এর কাছেই বেশ কিছু ইভেন্ট আছে। তাছাড়া নানা প্লাজাও এর খুব কাছেই, নানা প্লাজা নাইট লাইফের জন্য বিখ্যাত।
আমরা অবশ্য কিছু স্টিট ফুড ট্রাই করলাম সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ। এখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের মতই, গরমে ঘাম এতটুকুও কম নেই অক্টোবরের এই মাঝামাঝি সময়ে। বাংলাদেশে সাধারণত এই সময়টা সুন্দর একটা আবহাওয়া থাকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আর সেই আবহাওয়া আশা করা অবান্তর।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_19e192cb100c498ca5b3b952d9a12d23~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_1307,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_19e192cb100c498ca5b3b952d9a12d23~mv2.jpg)
কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করার পর গ্রেপ এপ ডাউনলোড করে টেক্সি অর্ডার করলাম। যেখানে ৪জন উঠতে পারে, সেখানে ৬জন গাদাগাদি করে উঠে “এশিয়াটিক” মেরিনা এরিয়াতে আসলাম। আমাদের দারুন ভাল লাগছিল, আমার বিশেষ করে সবাইকে এক সাথে পেয়ে আনন্দ আত্মহারা অবস্থা। কিছু ফটোশুট শেষে রেষ্টুরেন্টে বসে রাতের খাবার শেষ করলাম সাথে ছিল লাইভ মিউজিক। সুমন চাইছিল লোকাল কমিউনিটির কোন এক মার্কেটে যেতে। যেখান থেকে সে কিছু লোকাল প্রোডাক্ট কিনতে পারা যাবে।
অগত্য টেক্সিতে আবার ইউকেন্ড মার্কেটে গেলাম, অনেক প্রডাক্টের দোকান। একটু সারপ্রাইজ হলাম, দেখলাম দাম আকাশ ছোঁয়া প্রত্যেকটি জিনিসের, কেনার মত খুব একটা কিছু পেলাম না। ঘন্টা দেড়েক ঘুরলাম, কিছু পানীয় নিয়ে ফিরলাম হোষ্টেলে মেট্রোরেল যোগে।
এশিয়াটিক থেকে ইউকেন্ট মার্কেটে যাওয়ার সময় যে ড্রাইভার পেয়েছিলাম সে মাই-ডিয়ার টাইপের ছিল। সবাই কাজ করে টাকা ইনকাম করার জন্য, কিন্তু কিছু মানুষের ইনকামের কিছু আর্ট থাকে যেমনটি এই টেক্সি ড্রাইভারের ছিল। সে আমাদের ভবিষ্যত ট্যুর প্ল্যান সম্পর্কে জানতে চাইলো। আমরা মোটামুটি তাকে একটা ধারনা দিলাম, পরে সে আমাদের একটা ট্যুর প্ল্যান মুখে মুখে বলল। শুনতে খুব সুন্দর শুনাচ্ছিল, ওর সাথে কন্ট্রাক্ট করলাম আমরা আগামি কাল সকালে পাতেয়ার দিকে যেতে চাই কিন্তু রাস্তাতে আমাদের কমপক্ষে ৫টি দর্শনীয় স্থান দেখাতে হবে। সে আমাদের একটা প্রাইজ সেট করে পরের দিন সকাল ৬টার দিকে হোষ্টেলে আসার কথা দিয়ে চলে গেল।
ঘুমে মাথা ঘুরছে, আমরা প্রতিজন আরেকবার স্নান শেষে শুইতে গেলাম, রাত প্রায় ১টা। শুধু ৫ ঘন্টা ঘুমের সুযোগ আছে, যদি হঠাৎ করে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকে, তবেই পুরো সময়টা কাজে লাগানো যাবে। আমি শুইতেই ঘুমে হারালাম।
সকাল সাড়ে চারটা, হাসান সম্ভবত নামাজ পড়ে এসেছে তখন, আমি তখনো ঘুমাচ্ছি। সে কিছুক্ষণ পর আমাদের পোক করা শুরু করেছে, এক পর্যায়ে গায়ে ঠান্ডা হাত বুলানো শুরু করেছে। উঠে বসলাম, বুঝতে বাকি রইল না এইটা বৌয়ের হাত না, হাসানের হাত। লজ্জ্বা পাওয়ার কথা থাকলেও গালি দিয়ে দিনের শুরু। পোলাপাইন কি পরিমান বদমাইশ হইতে পারে সেটা ৫-৬টা পোলা একসাথে একরুমে ছাইড়া দিলেই বুঝা যায়।
৩য় দিনের থাইল্যান্ড
সকালে, ঘুম থেকে উঠে স্নান শেষে কাপড় পড়ার আগেই, টেক্সি ড্রাইভার ফোন করল, সে এখন হোষ্টেলের নিচে এসে আমাদের জন্য অপেক্ষায়। তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে নিচে আসলাম, টেক্সিলোড করলাম। ভাবছিলাম একটা মিনি ঘুম দিবো। কিন্তু পোলাপাইন যে পরিমান হাউকাও শুরু করছে আর বিভিন্ন সংবেদনশীল জায়গায় হাত দেওয়া শুরু করছে, তাতে ঘুমকে বিদায় দিয়ে আমিও তাদের সাথে হালের বলদে কান্দা মিলাইলাম।
অনেকগুলান জায়গায় টেক্সিড্রাইভার নিয়ে গেল, প্রায় ৫-৬টা ঘুরার মত জায়গা। দেখা জায়গাগুলোর মধ্যে “Water Front Market, Big Buddah, Tigar Park, Nongnooch Tradition Center, Nice- ছাড়াও অনেক জায়গায় ভবঘুরের মত ঘুরলাম।
টায়গার পার্কে একটা মজার অভিজ্ঞতা হল। আমরা ৬ জন সবার মোটামুটি হার্টের অবস্থা ভাল কিনা চেক করার জন্য বাঘের খাঁচায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলাম, তার মধ্যে আমি আর মিঠু রাজী হলাম বাঘের সাথে একটু কাছ থেকে কথাবার্তা বলার, বাকীরা একপা এগোয়’তো দুই পা পিছোয়! কারণ বাঘের খাঁচার মধ্যে এমন কোন কিছু ছিলনা, যদি বাঘ একবার খেপে যায় তাকে বাঁধা দেওয়ার। আমি আর মিঠু ভিতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর টিকেট কাটলাম। গেলাম দু’জনে, প্রথমে আমি গেলাম দুই বাঘের মাঝখানে বসলাম, মাঝে মাঝে লেজটা ঝেঁড়ে আমাকে সংকেত দিচ্ছিল, আমার উপস্থিতি তাদের পছন্দ হয়নি। আমার কয়েকটা ছবি নেওয়ার পর মিঠুকে পাঠালাম, সেও বেশ কয়েকবার বাঘকে ছুঁয়ে দেখে তার জীবনের শংকা অনুভূত করলো। কোন রকম ফটোশুটিং শেষে দুজন বের হলাম, পরস্পর পরস্পরকে দেখতে লাগলাম আর হঠাৎ এক পৌচাশিক জয়ের হাসি। কারণ আমাদের মনে হচ্ছিল, যে কোন সময় আমরা আমাদের প্রাণ হারাতে পারি বাঘের মুখে। বের হয়ে আরো কয়েকটা জায়গায় গেলাম তার মধ্যে গার্ডেন পার্ক উল্লেখযোগ্য, আশে পাশের কিছু এলাকা খুব পরিপাটি মনে হল।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_1e03e6a71ad54414b67feceeb933acae~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_1133,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_1e03e6a71ad54414b67feceeb933acae~mv2.jpg)
সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা আমাদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়ার পর ঘুম কম হওয়াতে আমরা রীতিমত ঘোরে ছিলাম। আমি বুকিং ডট কমে একটা হোষ্টেল ভাড়া নিলাম আর ড্রাইভারকে এড্রেস দিলাম। সে আমাদের হোটেলে রেখে ব্যাংককের উদ্দেশ্য চলে গেল। যাওয়ার সময় বলতে ভুলল না, যদি কোন সহযোগীতা লাগে তাকে যেন আমরা একবার কল করি। হোষ্টেলে উঠতেই দুজন স্থানীয় নারী ফাজলামী শুরু করল। মনে হল আমাদের দেখে তারা মজা নিচ্ছে নিজেদের ভাষায়। আমাদের যেহেতু একটু বিশ্রাম দরকার, সেহেতু কথা বাড়ানোর ইচ্ছা ছিলনা। কিন্তু রিসিপশনের মহিলাগুলো একেকবার একেক রকম কাগজ চাচ্ছিল, সাথে অতিরিক্ত টেক্স দাবী করাতে আমরা অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলাম। বেশ কথা কাটাকাটির পর্যায়ে তাদের ম্যানেজমেন্ট থেকে এক চাইনিজ এসে আমাদের সমস্যার কথা শুনলেন এবং স্বীকার করলেন যে, মেয়েগুলো বেয়াদবী করেছে।
অগত্য বুকিং ক্যান্সেল করে আরেকটি টেক্সি নিয়ে কাছের হোটেলে যাচ্ছিলাম, সেখানে বেটা লোকাল ড্রাইভার আমাদের সাথে দুই নম্বরী করছিল সোজা পথে না গিয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঝাড়ি দেওয়ার পর আমাদের হোটেলে এনে থামালো। এবারের হোটেল এবং রিসিপশনের মহিলা দুটোই ভাল পড়েছে। রুমে গিয়ে কোন রকম গোসল দিয়ে হাফ ছাড়লাম। ঘন্টা ২-৩ রেষ্ট নেওয়ার পর আমরা রাস্তায় বের হলাম, তখন সব রাস্তা ফাঁকা, কোন একটা ধর্মীয় কারণে তারা আজকের দিনটা ফ্রাইডে হিসাবে পালন করছে, মানে কোন বার খোলা নেই কোন মদের দোকান খোলা নেই।
আমরা হাটতে হাটতে সমুদ্র পাড়ে গেলাম, সমুদ্র তট পছন্দ হয়নি, কক্সবাজারের তুলনায় কিছুই না। তবু হাসি ঠাট্টাতে অনেক সময় কাটলো। বেশ রাত করে আমরা সবাই রুমে ফিরলাম, ঘুম থেকে ভোরে উঠেই রওনা দিবো।
৪র্থ দিনের থাইল্যান্ড
গত রাত এবং আজ সকালের প্রতিটা মুহুর্ত আমরা মজা করেছি, প্রতিটা বন্ধু তাদের রূপ বদলেছে। আমার স্বাভাবিক ক্যারেকটার এগ্রেসিভ হলেও ট্যুরে কনজারভেটিভ, আর যেগুলো কনজারভেটিভ ছিল সেগুলো সবগুলো এক এক জনের এক এক রূপ। সোশ্যালে, অনেক কিছু লেখা যাবে না, কারণ বেশির ভাগ বিষয়গুলো সামাজিক নয়, কিন্তু বন্ধুদের মধ্যে অসামাজিকও নয়। বরং ঐ রূপ না দেখলে, বন্ধুদের বন্ধু মনেই হবে না।
একটা গাড়িতে চেপে বসলাম আমরা সমুদ্র পাড়ে নিয়ে যাবে বলে, সেখান থেকে স্পীড বোটে চড়ে একটা বড় বোটে, সেখান থেকে আবার স্পীড বোটে কো ল্যান আইল্যান্ড। এই জায়গাটা পছন্দ হয়েছে অনেকটা সেন্টমার্টিন দ্বীপের মত। বেশ কয়েক ঘন্টা থেকে চামড়া পুড়ে ফেরত আসলাম পাতায়া সিটিতে। সিটিতে পৌছাঁতে একটু সিনক্রিয়েট হল লোকাল ট্যুর গাইডের সাথে, ঝামেলা সামলাতে লোকাল পুলিশ এসে তাদের পক্ষে রায় দিল (হারামীগুলা)।
লোকাল টুকটুকে উঠে বুফেট খেতে গেলাম, যেটা টুরের সাথে ইনক্লুড ছিল। খেয়ে অপেক্ষা করছিলাম গাড়ির জন্য, যেটা আমাদের হোটেলে নিয়ে যাবে। টুকটুক এ উঠতেই, বৃষ্টি, সেই বৃষ্টি। বৃষ্টি, গান, নাচ, কমেডি যার যা গুন আছে এই বৃষ্টি সব তাদের থেকে বের করে নিলো।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_d5130195c80340968e93c26a0bb2b172~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_735,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_d5130195c80340968e93c26a0bb2b172~mv2.jpg)
প্রায় আধা ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজে হোটেলে পৌঁছানো আগ মুহুর্তে বৃষ্টি থামলো। হোটেলে পৌঁছালাম বেলা তখন ৪টা। ঘুম দিলাম যে যার রুমে গিয়ে ঘন্টা ৩। পাবেল আমার রুম শেয়ার করছিল। ঘুম থেকে ডেকে দিল সন্ধ্যার দিকে। বিকালে আমরা সবাই হোটেলের নিচে গেলাম, নাস্তা করলাম। হাটতে হাটতে রাস্তার ধারে ম্যাসেজ সেন্টারগুলোতে প্রাইজ এবং সার্ভিস দেখছিলাম। সবাই মিলে একটাতে ঢুকে গেলাম থাই ম্যাসাজ নিতে। আমরা দু’একজন এমনিতেই অভ্যস্ত। সেখানেও অনেক কমেডি চলেছে।
শেষ করে বের হলাম সবাই। রাস্তাতে ঘুরছিলাম, ৯টা নাগাদ রেড লাইট ডিসট্রিকে ঢুকলাম। ঘুরে বের হলাম রাত ১২টা নাগাদ। অনেক পরিশ্রান্ত মনে হচ্ছিল, সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে একটা দারুন ঘুমের দরকার। পরের দিন আমরা পাতায়া ছাড়বো, ব্যাংককে আরেকটা দিন থেকে বাংলাদেশ ফিরবো।
৫ম দিনের থাইল্যান্ড
সকাল ৭টা নাগাদ আমাদের ফিক্সড করা ড্রাইভার আসলো। ৩-৪ ঘন্টা ড্রাইভের পর পৌঁছালাম ব্যাংককের নতুন হোটেলে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর সবাই মিলে বের হলাম, প্রথমে এম.বি.কে শপিং মলে গিয়ে কিছু গিফট কেনাকাটা করলাম, হাসানকে বিদায় দিলাম আজই তার ফ্লাইট বেক টু দুবাই বাইয়া শ্রীলংকা।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_7d3e6409848c41008380e8a3ba74549e~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_735,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_7d3e6409848c41008380e8a3ba74549e~mv2.jpg)
সন্ধ্যার পর নানা প্লাজার দিকে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরলাম, খাওয়া দাওয়া করে ফিরলাম তখন রাত ১২টা। এর মধ্যে আমাদের সবাইকে পেয়ে বসেছে বিদায়ী কষ্ট। মনে হচ্ছিল আর ক’টা দিন যদি এই ছন্নছাড়া মানুষের মত ঘুরতে পারতাম। সবগুলার চেহারা দেখার মত হচ্ছিল, সবাই ভেতরে ভেতরে কাঁদছিল।
৬ষ্ঠ দিনের থাইল্যান্ড
সকাল ১০টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠলাম, সবাইকে বলা ছিল, কারো যদি বাজার সদাই করার দরকার পরে চটজলদী যেন সেরে নেয়। আমাদের বিকালের দিকে ফ্লাইট, ২টা নাগাদ এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। সবাইকে খুঁজে পেলাম, কিন্তু পাবেলকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে তাকে রেখে সবাই এয়ারপোর্ট রওনা দিব, দেখি এসে হাজির। বেচারা বৌয়ের জন্য কি কি জানি খুঁজে ফিরছিল এম.বি.কে তে।
ঐফাঁকে আর্ট গ্যালারীর সামনে এক স্টেচুর সাথে ছবি তুলে নিলাম। আমাদের সিলেক্ট করা টেক্সি ড্রাইভার আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল। আর বিদায় জানালাম ব্যাংকককে।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_305b1b30919a4559ba1e2e1dd6523e87~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_457,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_auto/8355e9_305b1b30919a4559ba1e2e1dd6523e87~mv2.jpg)
আমার ব্যাংকক সফর সফলতা বলতে বন্ধুদের সাথে আড্ডার সময়টা ভিষণ এনজয় করেছি। এই রকম মিলন বছর দুয়েক পর পর করাটা জরুরী। আমাদের মন এবং শরীরে বিষ জমা থাকে বছরের পর বছর, এই রকম একটা মিলন মেলা, নিজেদের শরীর এবং মনকে আমার পুনঃস্থাপিত করে।
জানিনা আবার কবে আমাদের এক সাথে থাকা হবে এক অথবা দুইটা সপ্তাহ। স্রষ্টা আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন, আমরা যেন আবার একত্রিত হতে পারি।
ความคิดเห็น