top of page

South Africa


মানুষ গড়ে বাঁচে বড় জোর ৫০-৫৫ বছর। তার মধ্যে ২৫ বছর গড়িয়ে যায় গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করতে। আমাদের মত নিন্ম মধ্যেবিত্তদের তারচেয়ে বেশি কঠিন সময় পার করতে হয় ঐ গ্রেজুয়েশন শেষ করতে বেঁধে দেওয়া বয়সের মধ্যে। নিজের পড়ার খরচ নিজেকে বহন করা সহ পরিবারকে আর্থিক সামাজিক নিরাপত্তা তৈরী এবং ২৫ বছরের মধ্যে গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করে সামাজিক নিরাপত্তার স্বপ্ন আকাশ চুম্বি কল্পনা।



যাই হউক, বুদ্ধি বয়স থেকেই ঘোরাঘুরির ঝোঁক ছিল। আমার একটা ছোট টিম ছিল, সুজন দাদা, রাজু মামা, প্রণব এবং ধনঞ্জয়। বছরের কোন একটা সময় সবাই মিলে ঘুরতে বের হতাম।


একবার সবাই মিলে সীতাকুন্ড আশ্রমে যাব বলে ঠিক করলাম। সবাই প্রস্তুত, বেগ গোছানো, টিকেট কেটে সবাই বাসে উঠে বসলাম। কিন্তু কোন এক কারণে আমাকে নিচে নামতে হল অথবা আমি একটু দেরি করেছিলাম, বাস চলে গেল বাকি বন্ধুদের নিয়ে।



আমি পরের বাসটি ধরলাম। ধারণা ছিল, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম বাসে চকুরিয়ায় আধা ঘন্টা বিরতি। ভাগ্য সহায় থাকলে বন্ধুদের বাসটা ধরতে পারবো। ধারণাটা ঠিক ছিল, তারাও আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। তখন মানুষ ধারণার মধ্যে দিন যাপন করত। আজকের দিনের মত মোবাইল ছিলনা, ফেইসবুক মোবাইল ছাড়া সেই দিনগুলো। সবাই মিলে সম্ভবত শেষ বার একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়েছিল।


স্মৃতির অনেক কিছুই ফেকাশে হয়ে গেছে। জীবনের সম্পর্কগুলো হালকা নড়বড়ে হয়ে গেছে। তবে অতীতের ছোট খাট মজার ঘটনাগুলো ভুলে যাইনি।


যখন কিছুটা সামর্থ্য হতে শুরু, পরিবার এবং অন্যান্য খরচ শেষে সামান্য টাকা জমানোর সুযোগ হল তখন তিনটা জায়গায় জমানো টাকা খরচ করেছি। এগুলোকে খরচ বলা চলে না, বিনিয়োগ বলাই ভালোl



১. কিছু টাকা সম্বল করে ব্যবসায় মূলধন হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে, যা একদিন কয়েকগুণে ফিরে আসবে।


২. চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ জমানো, পরিবারের কারো বিপদে অথবা নিজের অসুস্থতায় কাজে লাগবে। মা’য়ের অপারেশনটা হওয়ার সময় ঐ জমানো টাকাগুলো খুবই কাজে লেগেছিল।


৩. দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো, সামর্থ্যের মধ্যে। বুড়ো বয়সে তো আর শরীরে জোর পাওয়া যাবে না। তাই বছরের ছুটিগুলো কাজে লাগানো।


Keep your profile Low. এই লাইনটি আমাদের সবার জন্য। কিন্তু আমি আমার প্রোফাইল High রাখার চেষ্ঠা করেছি। নিজেকে জাহির করানো নয় বরং আমায় দেখে হয়তো কিছু মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা তৈরী হবে জীবনকে উপভোগ করার। Pig কখনো Cow হয়না, তাই যাই করার চেষ্ঠা করিনা কেন, আজ অথবা কাল Pig/Cow ব্যাবধান গুলো ধরা পড়বে।



ফিরে আসি বয়সের গাণিতিক বিচারে। ২৫-৩০ বছরের মধ্যে বিয়ে আমাদের দেশের রীতিতে পরে। ত্রিশ বছর পার হওয়া ছেলেটি বিয়ের বাজারে পিছিয়ে পড়ে। তাই সবাই চায় এই বয়সের মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে। ৩০-৩৫ বছর কেটে যায় বিয়ে নামক পারিবারিক বিষয়টি বুঝতে, সাধারণত একটি ছেলে অথবা মেয়ের বিয়েরপর অনেক চেলেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই একটি থিতু হতে ৩৫ বছর পেড়িয়ে বাঁচ্চাদের প্রতি নজর দিতে হয়।


পরিবারের সব চাহিদা মিটিয়ে একটু স্বচ্ছল হতেই দেখা যায় ৪০ বছর পেড়িয়ে গেছে। হাতে যে বাকী সময়গুলো আছে তাতে অনেক কিছু করার থাকলেও আমরা গন্ডিতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ি। নিজেকে ঐ বন্ধন থেকে মুক্ত করে পৃথিবীটাকে ব্যাতিক্রম করে দেখার চেষ্ঠা করার সুযোগ হারিয়ে ফেলি।


প্রতিদিনকার রুটিন থেকে নিজেকে বের করতে না পারার কারণে, নিজের স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে পরে। ঠিক কয়েকদিন আগে এক প্রাণের প্রিয় বন্ধুকে জীজ্ঞাসা করলাম, ভাইয়া ধরেন আপনি কোন একটি নতুন দেশে ঘুরতে যাবেন একা। আপনার মনের অবস্থা কি হতে পারে? সোজা উত্তর, নিজেকে প্রস্তুত করার চেয়ে ভয় পাচ্ছেন, নতুন জায়গাটা কি হবে ভেবে। উনার উত্তেজ্জনা হওয়া উচিত ছিল, দারুনতো, একটা নতুন দেশ ঘুরে দেখা যাবে। সেখানে কপালে ভাজ তুলে কি কি সমস্যা হতে পারে সেই লিষ্ট তৈরী করছিলেন। উনার চেহেরা দেখে আমি বুঝতে পেরে জানতে চাইলাম।


হাতের দশ বছর কি খুব বেশি ৪০-৫০ বছরের পর যে বছরগুলো হাতে পাবেন তা হল বোনাস। পাইলে ভাল, না পাইলে কপ্লেইন করার কিছু নাই। আমি বেশিদিন বাঁচবো বাজেট করে দিন চলিনা। আমার মনে হয়, জীবনটা ছোট। যা কিছু আছে তাই সামনে, ভবিষ্যত ভবিষ্যতের হাতে। মরার আগে ইশ্‌/যদি শব্দগুলো ঝুঁড়ি থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাই। কোন ইচ্ছাই বাকী থাকবেনা যেদিন আমার শেষ দিন আসবে।


উপরের লেখাগুলো সৌজন্যে তাদের জন্য, যারা এখনো ঘর থেকে বের হননি।


দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া,

দরজা থেকে দু’পা ফেলিয়া

বেশি দিন বেঁচে থাকার কন্ট্রাক নিয়ে আসিনি, দিন শেষে ফিরতে হবে। ফেরার প্রস্তুতি না ফেরার দেশে, রেখে যাব কিছু গল্প।


আমার বাজেটে প্রতি বছর অন্তত ২টি নতুন দেশ ভ্রমন থাকে। এ বছর হয়তো ৪টি হবে, ডিসেম্বরে পারিবারিক মিলন মেলায় কিছু প্রাণ প্রিয় মানুষের সাথে ভিয়েতনাম দেখা হওয়ার কথা। কয়েক’টা পরিবার অনেক বছরের পরিকল্পনা। বাঁকিটা দেখা যাক। ভিয়েত নামে যেতে হলে থাইল্যান্ডে আমাদের ট্রান্সজিট নিতে হতে পারে। সেই সুবাধে ক’য়েকদিন হয়তঃ থাইল্যান্ড ঘুরার সুযোগ হবে।


এ বছর ২ বার দেশে আসা হয়েছে, নেপালে একবার। সব মিলিয়ে ছুটি খুব বেশি বাকি নাই। তার মধ্যে একটা কনসাল্টেসি কাজে সৌদি যেতে হতে পারে, তবে সব কিছু সময়ের উপর নির্ভর করছে।


গত জুনে দেশ থেকে ফিরে ভাব ছিলাম আফ্রিকার ট্যুর দিব। মিডিলিষ্টে থাকার একটা সুবিধা আছে, আপনি চাইলেই যে কোন দেশে উড়াল দিতে পারেন, কোন দেশই আপনার জন্য দূরে নয়। আমার জানামতে ১৪ ঘন্টার ফ্লাইট হচ্ছে সবচেয়ে দূরত্বের দেশ, বাকী দেশগুলোতে আপনি চাইলে ৩-৫ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন।


ভিসার প্রসেসিংটাও অনেক সুবিধা। আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট হওয়ার স্বত্ত্বেও তেমন কোন বেগ পাইতে হয়না ভিসা নিতে। সবরকম দলিল দস্তাবেজ জমা সঠিক নিয়মে করলেই ভিসা দিয়ে দেয়।


প্রতিটা দেশ ঘুরতে যাওয়ার আগে আমি ভালমত দেশ, শহর গুলোর আদ্যপান্ত তথ্য নিজের মগজে নেওয়ার চেষ্ঠা করি। অনেকটা সময় ইউটিবে এবং ব্লগে কাটাই। অনেকটা দেশ মনে মনে দেখা নেয়া। তাই যেই দেশেই যাই না কেন মনে হয়না অপরিচিত অথবা অপ্রত্যাশিত।


৩০ তারিখ রাত ১২টা আমার ইমিগ্রেশন ছিল দুবাই থেকে। ইমিগ্রেশন ক্রস করার পর রাত দুইটা নাগাদ আমাদের উড়োজাহাজ পাড়ি দেয় নাইরোবির উদ্দেশ্যে। এই সপ্তাটা সাংঘাতিক খারাপ গেছে, অনেকগুলো কাজ শেষ করতে হল জাহাজে চাপার আগে, পাছে ছুটিতে কাজ করা না লাগে।


প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পড় নাইরোবী কেনিয়াতে এসে পৌঁছালাম, ঠিক তার দেড় ঘন্টা পর আরেকটি ফ্লাইট আমাদের নিয়ে জহনাসবারর্গ নিয়ে উড়াল দিল। সাউথ আফ্রিকার আসার আগে আমার ইউলো ফিভার ভেকসিনেশন নেওয়া লেগেছে। হলুদ জ্বর নাকি খুবই ভয়ানক, যেটা আমরা বাংলাদেশে জন্ডিস বলে থাকি। এডিস মশা এই রোগ ছড়াতে পারে খুব ধ্রুত। তাছাড়া এই ইনজেশনের সার্টিফিকেট ছাড়া বোডিং পাস দিবে না সেটা আগে থেকে বলা ছিল।


জহনাসবারর্গ নেমার পর একটা টেক্সি নিয়ে আরেকটি এয়ারপোর্ট থেকে আন্তঃ বিমান ধরতে হল। একটা ছোট ভুল করেছিলাম, যখন ফ্লাইট বুক করছিলাম তখন খেয়াল করিনাই যে আন্তঃ বিমানটি অন্য একটি এয়ারপোর্ট থেকে উড়ান দিবে কেপ টাউনের উদ্দেশ্যে।


যখন খেয়াল করলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। টিকেট ফেরতঃ দিলেও পয়সা ফেরত পাওয়া যাবে না। শেষ মেষ টেক্সি নিয়ে সঠিক সময়ের আগে পৌঁছালাম। কাল সন্ধ্যায় কেপ টাউন নেমে টেক্সি যোগে হোটেল। সব মিলিয়ে ১২ ঘন্টার ফ্লাইট, ১৮ ঘন্টার ভ্রমণ শরীরের গিড় ঢিলে হয়ে পড়েছে।


রাতে একটা বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলাম ঝাল। কি পরিমান যে ঝাল দিয়ে বানানো সেটা বুঝতে সারারাত কেটে গেল। পেটের মোচড় এবং সকালে বাথরুমে মল ঘরের জ্বালা। যাই হউক সিদ্ধান্ত স্পাইস দেওয়া কিছু খাবনা পরের কয়দিন।


আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই তৈরী হলাম একটু বার হব। নাস্তাটা করতে উবার নিয়ে ওয়াটার ফ্রান্ট গেলাম। অনেক্ষণ ছিলাম। আমাদের ট্যুর অপারেটর আসবে বিকাল ৫টায়। আরেকটা হোটেলে চেক ইন করে আপাতত বিশ্রাম নিচ্ছি।


হোটেলটার নাম কেমন জানি "অশান্তি লডজ্‌" । শান্তি খুঁজতে কি অশান্তিতেই আসলাম। দেখা যাক সময় কি বলে?

এখন দুপুর আড়াটা। সম্ভবত বিকালটা বাইরে কাটাবো।

কেপটাউনে দ্বীতিয় দিন

আজকের দিনটা কেমন ছিল? ভাল কিংবা খারাপ দুটোর কোনটা নির্ণয়ের আগে গতকালকে একটু ডেকে আনি।


আমি চেষ্ঠা করি কিছু কিছু ভ্রমন ট্যুর অপারেটরদের সাথে করার। যেমনটি আমার ইউরোপের ট্রিপটা ছিল। নতুন অনেক মানুষের সাথে পরিচয়, বিছানা ভাগাভাগি, কোলাহল, আচার উপভোগ করার একটা বিষয় আছে। মানুষের সাথে পাশাপাশি থেকে শিখা ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়।


এবারের সাউথ আফ্রিকা ভ্রমনটা ট্যুর অপারেটরের সাথেই বুক করা ছিল। আমি ১ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় গাইডের সাথে দেখা হওয়ার কথা থাকলেও সে আসতে দেরি হওয়াতে ইউ.কে তে ফোনে সামান্য ধমকাই। সেখান থেকে জানানো হয় গাইড কোন একটা ট্যুরে দেরি করে ফেলেছে তাই দেখা হবে বিকাল ৫টায়। আমাকে শান্তি লজ্‌ এ রুম নিতে বলল, ওরা আমার জন্য একটা ড্রম এর ৮ সিটের একটা সিট বুক করেছে।


রুমে ঢুকে মাথাই বাজ, সব ছোট ছোট ছেলে মেয়ে বয়স ১৯-২২ এর মধ্যে। ঐ বয়সের মানুষের মধ্যে যা থাকে, ঠিক হই হুল্লোড করছিল। কিছু না বলে নিচে আসলাম, ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে সময় পার করে গাইডের সাথে দেখা হল বিকাল ৫:১৮মিনিটে। দেখা হওয়ার সাথে সাথে নরম সুরে হালকা ঝাড়ি দিলাম। বিনয়ের সাথে সে বলল, ক্ষতি পুষিয়ে দিবে, ছেলেটা ভাল মনে হচ্ছে।



যাই হউক টাকা পয়সার হিসাব বুঝাই দিলাম, সে আমাদের ট্যুর বুঝাই দিল। কইল আমাদের ২ তারিখ নিজেদের মত ঘুরতে হবে কেপ টাউনে। তারে কইলাম রুম বদলানো লাগবে। সে হোটেলে কথা বলে আরেকটা রুমে সিফট করে দিল সেখানে ৬ জনের থাকার ব্যাবস্থা, যদিও শুধু ২ জন আছে, আমি সহ তিন জন। দু’জনই ছিল ছেলে, আজ সকালে চলে গেছে, একটা কোরিয়া থেকে, অন্যটা ইউরোপের।


যাই হউক আজকে রুমে নতুন যে কেউ আসতে পারে। সমস্যা না, আমিতো নিচের সিটেই আছি, আর যেহেতু আগে থেকে আছি নতুন কেউ আসলে ডরাইব। সাইকোলজিক ম্যাথ্‌, ডরানের কিছু নায়, যাষ্ট একটু সমিহ করবো এই আরকি! যেটা আমি নিজেও করি, অন্য কোন রুমে গেলে, আমার আগে কেউ থাকলে, যেটা করা লাগে।


সন্ধ্যায় ঘুরাঘুরি শেষে রুমে এসে দেখলাম ৫জন রমনি। আমি একজন রমনা… চিন্তার বিষয়। রুম বদলামু কিনা, একলা রুম নিমু। ৩টা মেয়ের বয়স ২২-২৫ এর মধ্যে, অন্যগুলা বাচ্চা মাইয়া মিন্‌স ২০ এর নিচে। গেলাম রিপেসশনে, আমার কথা শুনে হালায় হাসতে হাসতে খুন। জুতাইতে ইচ্ছা করছিল, কয় এটা তো এখানে স্বাভাবিক, তোর কি সমস্যা ওদের সমস্যা না হলে। সমস্যা আমার তো মানষিক, দক্ষিণ এশিয়ার মানষিকতা, অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক এই আর কি। অন্যরুম খালি নায়, আজ ফুল। অন্য হোটেলে চেক করে দেখলাম সহায় কিছুই কাছাকাছি নাই। এতরাতে কই যামু, ওদের সাথেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাকি কৃষ্ণের কৃপা।


আজ সকালটা ঘোরের মধ্যে কাটছে। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নাস্তা করলাম, আমার টিমের এক কানাডিয়ান পরিবার আমার সাথে যোগদিল। গতকাল তাদের জন্য ২টা ট্যুর অনলাইনে বুক করে দিয়েছিলাম। তাছাড়া ওরা আমার সাথে যাইতে চাইছিল। দু’জনরে নিয়ে উবার যোগে টেবল মাউন্টেনে গেলাম। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটা, না দেখে গেলে মনটা কেমুন কেমুন করবে। সাড়ে আট -টার মধ্যে লাইনে দাঁড়ালাম। সকলে মিলে কেবল কারে করে মাউন্টেনে উঠলাম। আমার এত ভাল লাগছিল, হয়তো নিজের ভেতরকার একটা স্বত্তা হারায় ফেলেছিলাম। আসলেই রূঢ প্রকৃতি কত সুন্দর হতে পরে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাইতো না। কেমন যেন খেই হারায় ফেললাম, অনেকটা আনমনা হয়ে ফেরলাম ঘন্টা দেড়েক পরে নিচে।


আমার সাথে থাকা ঐ দু’কানাডিয়ান জানতে চাইল এখন কই যাইবা। বেলা ১১টা বাজে, আড়াইটা বাজতে অনেক বাকি, রবিন আইল্যান্ডে যাবো তিনটাই। মাঝখানের সময়টা কোন একটা মিউজিয়ামে যাব বলে উবার ডাক দিলাম।


উবার থেকে মিউজিয়ামের যাওয়ার সময় এক কালা ভাইয়ের লগে খাজুড়ে আলাপ লাগাইছিলাম। কখন মিউজিয়ামে পৌঁছায় গেছি খেয়াল করি নাই। মিউজিয়ামের সামনে নেমে যেই ছবি তুলতে যাব দেখি ডিএস এলআর ক্যামেরাটা নায় হয়ে গেছে। উবারের গাড়িটা তখন যায় নায়, গিয়া দরজা খুলে বহুত খুঁজলাম, মনে পড়ল যখন উবার বুক করছিলাম তখন একটা টেবিলের উপর বাম হাতে ক্যামেরা ফালাইয়া চইলা আসছি। কালা ভাইরে কইলাম ভাগ মামু ভাগ… নিজের কপাল বিচরাইয়া দেখি, যদি লাইগা যাই সিকিউরিটির হাতে ক্যামেরাটা বাইচ্চা যাইবো।


যাইতে যাইতে কষ্ট হচ্ছিল ক্যামেরা হারানো জন্য নয়, এই যে ছবি আর সময়গুলো টাকা দিলেও পাবনা ভেবে। ক্যামেরা খারাপ হইলেত খতম হয়ে যাইতো, কিন্তু ছবিগুলান। যাই হউক, সাউথ আফ্রিকাতে জান মালের নিরাপত্তা বাংলাদেশের চেয়ে কম বলেই শুনছিলাম। টেবল মাউন্টেনে পৌঁছাইতেই গেলাম ঐ টেবিলের কাছে, দেখি টেবিল আছে কিন্তু ক্যামেরা নাই।


এক কালা সিকিউরিটি ভাইরে দেখলাম, জিজ্ঞাসা করার আগে কয় উপ্রে যা… দরজা খুলতে শুরু করলে কইলাম ভাই আমার মাল হারাইছে। কয়, জানি উপ্রে যা, কইলাম ক্যামরা হারায়ছে, কয় দেখছি তর ছবি সেজন্য কইলাম উপ্রে যা… একটা জরাই ধইরা চুম্মা খাইলাম… শরম পাইছে মনে হইল। উপ্রে গিয়ে দেখলাম মহিলা আমারে দেইখা ক্যামেরা সামনে নিয়া কয় কাগজে সই করে নিয়া যা। কইলাম প্রুফ দেওয়া লাগবো না? কই তর ছবি আছে ঐইটা প্রুফ, যা ভাগ।


নিচে আইসা সেই উবার ওলারে নিয়ে আবার মিউজিয়ামে গেলাম, তারে ১০০ দেরহামের একটা বকশিস দিলাম। খুশি হইয়া, দোয়া পড়তে পড়তে চলিয়া গেল।


কিছুক্ষণ থাকার পর মিউজিয়ামে, আরেকটা ফিরতে উবারে হোটেলে ফিরে ঘন্টা খানি বিশ্রাম নিলাম। কাপড় বদলাইয়া, বারাইতে হাটা ধরলাম একটা ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে গুগলম্যাপ ধরে। দোকানদার বিরানি খাওয়ানোর পর একটা বড় বিল ধরাই দিল। বুঝতে পারছিলাম, হালায় হারামি আছে, খাবারের দাম বেশি নিছে অন্তত দুইগুন। বিলায় মাইর খাইয়া যেমনে চলে আসে, সেরাম বাইর হইয়া আরেকটা উবার নিয়া ওয়াটার ফ্রন্ট গেলাম।


সেখান থেকে বড় বোট (শিপে) করে গেলাম রবিন আইল্যান্ড। কালো কালো মানুষের দেশে ঐ কালো মাটিতে নেনস্যাল মেন্ডেলা তুমি… গানটা অনেকের মনে আছে তাই না?


আমারো আছে তবে ঐ টুকুই। বাকি ভুইলা গেছি… ;)


বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে, গাইড প্রচুর তথ্য দিল, কিছু মাথাই ঢুকছে, কিছু মাথার উপর দিয়া গেছে। যা ছিল তা নিয়ে স্যার ম্যান্ডেলার জেল দেইখা জেল থেকে মুক্ত হইলাম। হালকা হাওয়া খাইতে সমুদ্রের কাছে আসতে দেখি কোট পরা ভদ্র লোকের ছোট ছোট বাইচ্চা আমার দিকে করুন চোখে তাকাই আছে কয়েকটা ছবি নেওনের লাইগা।


যাই হউক খুশি করলাম নিজের সাথে তাদের কয়েকখান সুন্দর ছবি তুলে। পেঙ্গুইন পাখি, কোট পড়া ভদ্র লোক। লেখাপড়া করার সময় কোন এক বইতে পাইছিলাম। কিছুতো পড়ালেখা করছি, সেটা মনে হয়, যখন এই রকম উদাহরণগুলা মনে পড়ে যাই। আমার স্যারেরা সার্থক, দিনে দুইবেলা মাইর দিয়া অন্ততঃ কিছু পড়া মাথায় ঢুকাইতে পারছে। স্যারদের জন্য ভালবাসা আর কিছুক্ষণ নিরবতা।


নিরবতা ভাঙ্গতেই এক ছোট ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। ও আমার ওয়ালে সমুদ্রে ফিশিং প্লেন দেখে মনে করছিল আমি এগুলান সাউথ আফ্রিকা করুম। সে ওর্য়ানিং করছিল যেন না করি, কেন? কয় যে পরিমান রাফ সমুদ্রের ঢেউ, ওর নাকি বিচিবুচি কান্ধে উইঠা গেছিল। আমি কথাটা শুনে মজা নিছিলাম। আজ যখন ফিরছিলাম রবিন আইল্যান্ড থেকে, তখন সমুদ্রের ঢেউ এতবড় শিপের ইঞ্চিন আমাগো ঘাঢ়ে উঠাই দেয়নাই এটাই ভাগ্য। এমন রুলিং করছে, আমার রীতিমত মাথাব্যাথা শুরু হয়ে গেছিল, বমি বমি ভাব লাগা শুরু হয়ে গেছিল।


যাই হউক আজকের মত বহুত ফাউ প্যাঁচাল পাড়লাম। আল্লাহ হাফেজ… দোয়া কইরেন। কাইল রিয়েল ট্রিপ শুরু….


আফ্রিকা - আজ তৃতীয় দিন


সকাল ৭টায় এলার্ম শুনে ঘুম থেকে পড়ি মরি করে উঠলাম। আশে পাশের সিটের মেয়েগুলান ঘুমাচ্ছে। এলার্ম বন্ধ করে কিছু গোছগাছ করেই সকালের স্নান করে খাবার খেয়ে নিলাম। খেয়ে এসে দেখি মেয়েগুলোও তৈরী হচ্ছে, বেরুবে। গতকাল রাতে অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়েছি তাদের সাথে বারএ। কোথাই কি কে কি করছে এই সব। অনেক বেশি স্বাধীন চেতা, তবে এখানে পরিবেশ এবং বাবা-মায়ের অবদান বেশি।


৫টি মেয়ে ২টি গ্রুপের, একটি ৩ জনের অন্যটি ২ জনের। একটি গ্রুপ আফ্রিকা আর এশিয়ার মোট ৫ টা দেশ ঘুরবে ৯০ দিনের মধ্যে, আরেকটি আফ্রিকা ঘুরে ৬০দিন পর দেশে ফিরবে। এই ৬০ বা ৯০ দিনের প্ল্যান তারা করেছে ২-৩ বছর যাবৎ। পকেট মানি বাঁচিয়ে, ম্যাগডোনাল অথবা কোন ফাষ্ট ফুড সপে অতিরিক্ত ঘন্টা কাজ করে তারা অনেকটা নিজের টাকায় ঘুরতে বার হয়েছে। তাদের মুখে শুনা কথা, সবচেয়ে কঠিন বাইরের দেশে ঘুরতে যাওয়া হল পরিবারের সম্মত্তি। এই সম্মত্তি নিতে তাদের পরিবারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হয়েছে।


আসলেই, যতটা আমরা উপর থেকে দেখি, ঠিক ততটা নয়। গভীরতা প্রতিটা বিষয় ভিন্ন এবং অনেক বেশি অর্থবহ। যেভাবে ওদের বেড়ে উঠা, তাতে তাদের পরিবারের কোন সমস্যা ভবিষ্যতে হওয়ার কথা নয়, তবে এখানে শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক অবস্থান এবং ভৌগলিক একটা ব্যাপার আছে।


সকালে আরেকবার বিদায় জানিয়ে বেলা ১০টায় নিচে এসে গাইডের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।


গতকালের পোষ্ট দেখে অনেক ডার্টি মাইন্ড মজা নিতে অপেক্ষা করছে। তাদের জ্ঞ্যাতার্থে জানানো হইল কোন সমস্যা অথবা অঘটন ঘটে নায়। যেহেতু সময়, পরিবেশ এবং পাত্র সব জায়গা মত ছিল। একটা ভুল ধারণা ছিল যা পাল্টে গেছে। রাতে আমার বেডের উপরের বিছানায় অথবা অন্য বিছানার মেয়েগুলা ফিরেছে সম্ভবত রাত ১২টার পর। আমি বার ছেড়েছিলাম ১১টার দিকে, এসেই ঘুম। মাঝে কয়েকবার ঘুম ভাঙ্গে, এর মধ্যে খেয়াল করেছি কেউ বাইরে থেকে আসছে অথবা একটা মেয়ে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। তারা এমনভাবে কথা বলছিল যেন আমাদের কানে যেন না আসে আর সংক্ষিপ্ত, দরজা বন্ধ করছে খুলছে যেন বুঝা না যায়। সভাবতই উপরের সিটে কেউ নড়াচড়া করলে নিচের সিটে শব্দ হওয়ার কথা। কিন্তু ওরা এমনভাবে নিজেদের সংযত রেখেছে যেটা আমি আশা করিনি।


সংযম অথবা অন্য কাউকে বিরক্ত না করা থেকে কিভাবে বিরত থাকা যায়, বিশেষ করে এই রকম বয়সে। এই প্রশিক্ষণগুলো তারা আগে থেকেই নিয়ে এসেছে। আমাদের ছেলে মেয়েদের ঐ জীনিসগুলোই শিখানো দরকার।


নেস্‌ আমাদের ট্যুর গাইড এসে আমাদের ব্যাগ গাড়িতে উঠালো। সবাই গাড়িতে চেপে বসলাম, মোটামুটি ১৫ জনের একট টিম। ২টা বুড়ো কাপল, ১টা গে কাপল, ২টা ইয়াং পোলা, ১ জোড়া ছেলে মেয়ে (ভাই/বোন), ৪ জনের আরেকটা টিম আর আমি।


আমাদের গাড়িটা একটা ট্রাককে কাস্টমাইজ করে বানানো হয়েছে। মজবুত ট্রাকের দরকার তখন পর্যন্ত বুঝি নাই যতক্ষণ ঐ ট্রাক রাস্তা ছাড়া রাস্তায় চলা শুরু করে নায়। এই ট্রাক ছাড়া অন্য গাড়িতে আসলে গাড়ির অবস্থা বেসম্ভব খারাপ হয়ে যায়তো। ফোরহুইল গাড়ি ছাড়া ঐ রাস্তাগুলোতে গাড়ি চলাচল করা প্রায় অসম্ভব।


প্রায় সময় ফেইবুকের টাইম লাইম স্ক্রল করতে করতে দেখি অনেক ইয়াং ছেলে মেয়ে হতাশায় ডুবার কথা বলে। দেখে না দেখার ভান করি, মাঝে মাঝে বয়সের দোষ মনে করি। গতকাল ক্যামারাটা হারানোর পর একটা ব্যাপার নিজের ভেতর লক্ষ্য করলাম। দেখা যাক যা আমি অনুভব করেছি তা লিখে প্রকাশ করতে পারি কিনা?


ক্যামেরাটা হারানোর পর, ক্যামেরার জন্য শোকাহত হয়নি। বার বার কষ্ট হচ্ছিল সময়গুলো হারানোর জন্য। কারণ আমার হাতে আর সময় নাই যে আমি আমার আরেকটি ক্যামেরা কিনে ঐ জায়গায় যেতে পারবো। অথবা পারলেও ঐ সময় আমি যে ভাবনাতে ছিলাম, আমার অনুভুতিটা যা ছিল তা আমার মনে আবার আনতে পারবো না। টিকেট পাওয়ার কোন সম্ভবনাও নাই যে মোবাইল থেকে হয়তো একই বা কাছাকাছি মানের কয়েকটা ছবি তুলে নিব। আর আমি যদি কেপ টাউনে আর একদিন বেশি থাকি তবে আমার ট্রিপটা মিস হয়ে যাবে। আর ঐ ছবিগুলো না থাকলে আমার জীবনের ইতিহাসগুলো প্রমান বিহিন হয়ে যাবে।


মোদ্দা কথা, কোন ভাবেই আমি সময়গুলো ফিরে পাবো না। কোটি টাকা খরচ করেও না। ধরে নেওয়া যাক আমি আবার আরেকবার আসলাম, তবে আফসোস টা থেকেই যাবে। আরেকবার আসা মানে আমার জীবনের আরো কিছু সময় বিনিয়োগ করা, এতে আমার বর্তমান জীবনের কোন এক সময়কে ক্ষতিগ্রস্থ করা। যেভাবেই যাই করিনা কেন কোন না কোন ভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। সেটা কখনো কোন ভাবেই ছোট ক্ষতি নয় যে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।


প্রেম এমন একটা জীনিস, যে কোন সময় যে কোন কারো সাথে হয়ে যায়তে পারে। আবার ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়, নতুন সম্পর্কেও জড়িয়ে যায়। নতুন সম্পর্কে আসার পর ছেলে মেয়েরা তাদের অতীত নিয়ে অনেক কষ্ট পায়। তাদের ‍পুরানো সংঙ্গিকে ফিরে পেতে চায় অথবা অতীতের ভুল শুধরে নতুন করে শুরু করতে চায়। যদি সময় থাকে নতুন করে শুরু করার আগের সঙ্গির সাথে তবে ভাল কথা। অনেকটা আমার কেপ টাউনের ট্রিপের মত, যদি আমার হাতে অতিরিক্ত আরেকটা দিন থাকতো তবে ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেতাম। আর যদি সুযোগ না থাকে, অর্থাৎ পুরানো সঙ্গি আসলেই অন্য কারো হয়ে গেছে তবে সেক্ষেত্রে পেছনে ফিরে না তাকানোই উচিত। কারণ পুরানো সঙ্গিকে ফিরাতে হলে কয়েকটা পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই ক্ষতিগুলো কোন ভাবেই কেউ কখনো পুষিয়ে নিতে পারে না। আপাত দৃষ্টিতে কোন কারণে হয়তো পুরানো মানুষটিকে ফিরে পেলেও ঐ যে টান টা প্রথম অবস্থায় থাকার কথা সেটা না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তাতে হিতে বিপরীতের সম্ভবনা বেশি বই কম হবে না। এতে হতাশা বাড়বে, মনের চাহিদা আর বাস্তবতার ফারাক সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলবে।


তিনটা অবস্থান মানুষের সামনে থাকে, যেখান থেকে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি সম্পর্কের ব্যাপারে-


১। যাকে ভালবাসবো তাকে সহসা বিশ্বাস করার চেয়ে সময় নিয়ে ভালবাসা ভাল। এটাকে বাস্তবতার ভিত্তিতেই মাপা উচিত। একটু বেশি সময় যাচাই বাছাই করে তারপর সারা জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

২। যদি ভুল হয়েছে মনে হয়, তবে অপেক্ষা করা। হুট করে ব্রেক আপে না যাওয়া, কারণ এতে কার কতক্ষতি হচ্ছে তার যাচাই বাছাই প্রয়োজন।

৩। যদি কোন কারণে ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়, তবে আর পেছন ফিরে না তাকানো। যা হবার তা হয়েছে, অতীতকে পেছনে টেনে নেওয়াটা সত্যিই ভয়ংকর একটা ব্যাপার।


জানিনা আমি ব্যাপটা সত্যিই বুঝাতে পেরেছি কিনা? এটা আমার একটা ভাবনা মাত্র। মনে হল তাই সবার কাছে শেয়ার করলাম, হয়তো কারো কাজে লাগবে ডিপ্রেশন থেকে বের হতে। জীবনতো একটাই, যা আছে সামনে। মেনে নিতে হবে যদি কোন নতুন ক্ষতির সম্মুখীন হতে না চাই।


আজকে লেখার মুড নাই, একটু ক্লান্ত।


তবে অনেক কিছু মাথায় জমানো, সময় হলে আবার লিখবো।


আজকে একটি গাছে অনেক বাবুই পাখি দেখে হঠাৎ শৈশবে ফিরে গেলাম। খুরুশকুল পাল পাড়ায় আজ যেখানে রাস মন্দির আছে, সেখানে আমার দাদার পুরানো বাড়ি ছিল। ঐ খানে একটি তালগাছে এই রকম বাবুই পাখি বাসা বেঁধে ছিল। ঠাকুর দাদা মানুষটা অনেক শান্ত একটা ভাল মানুষ ছিলেন। উনার ছেলেদের মধ্যে কারো ঐ মেজাজ দেখলাম না। ঠাকুমা ছিলেন সামান্য কুটিল, জারগা। বাবা আর বাকি ভাইরা টুকটাক উনার কোন না কোন দোষ পাইছে। হা হা হা...


শুভ রাত্রী।



আফ্রিকা - চতুর্থ পঞ্চম দিন


গতকাল সকাল দশটায় থেকে গাড়ি চলা শুরু করেছিল কেপ টাউন থেকে। দুপুরে সার্ভিস ষ্টেশনে খাবার শেষে সন্ধ্যায় কেপ আগুলহাস বীচের কাছে কিছুক্ষণ সময় কাটাই। ঠান্ডা বরফের মত পানি, লাইট হাউসটি এবং সাথে পাহাড়ের কম্পিনেশনে সমুদ্রের কিনারাটা মনে হচ্ছিল কোন এক অন্য জগতে এসে পৌঁচেছি। ছোট বেলায় সাত গোয়েন্দা পড়ার সময় লেখক যেভাবে সমুদ্র, পাহাড় এবং পরিবেশের বর্ণনা দিত অনেকটা এই রকম মনে হচ্ছিল।


এটা একটা মফস্বল এলাকা, সম্ভবত রিটায়ার্ড লোকজন এখানে অবকাস যাপনের জন্য আসেন। সন্ধ্যার পর অনেকটা ভূতুরে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো জায়গাটা।


সমুদ্রের পাড় থেকে কাঠের ছোট একটি রাস্তা লাইট হাউসে এসে পড়েছে। লাইট হাউসটা অনেক পুরানো, কিন্তু ভালই যত্নে রাখা বলেই দেখতে নতুন দেখাছিল। সন্ধ্যা গড়াতেই হোটেলে চেকইন করলাম। হোটেলের সদর দরজায় ঢুকতেই বড় একটা অন্য ধরনের তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা দেখলাম। ভেতরে ঢুকতেই চৎমকার করে সাজানো বার। রুমে কাপড় চোপড় রেখে আড্ডায় বসলাম ২ কানাডিয়ান পরিবারের সাথে।


এক পরিবারের একটা মেয়ে আছে বিয়ে হয়ে গেছে, অন্য পরিবারের কোন বাচ্চা নেই। সবে মাত্র দুই পরিবারের ৪ জন মানুষই রিটায়ার্ড করেছেন। একজন আবার নিউক্লিয়ারের কোন এক ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন। অনেক কথা বলেন, বুড়োদের সাথে আলাপ বিশেষ করে ২-৩ গ্লাস উয়াইনের পর ভালই জমে। পেটে তেমন বেশি কথা থাকে না। অনেক আলাপ চারিতায় এমন কিছু কথা জানতে পারি যা সোশ্যালে বলার মত নয়। অনেক সংবেদনশীল তথ্য, তথ্যগুলো বাস্তব এবং বিজ্ঞান সম্মত কোন প্রমান দেওয়া যাবেনা। ভুল জায়গায় আলাপ হলে, পাগলের প্রলাপ ছাড়া কেউ এর বেশি কিছু মনে করবে না। যাই হউক তত ভেতরে গেলাম না। ঐ হোটেলে একটা তোতা পাখি ছিল, এসেই আমার ঘাড়ে উড়ে বসেই কথা বলা শুরু, সে কোন ভাবেই যাবে না, ছাড়বেনা, সম্ভবত প্রেমে পড়েছে। নামাতে চাইলেই কামড় দিচ্ছিল, শেষমেষ কিছু খাবার খাঁচার উপর রেখে তাকে ঘাড় থেকে নামালাম।


রাত্রে সবাই একসাথে রান্না করলাম, খেলাম, নিজেরাই ধোঁয়া মোছার কাজ করলাম। নিজেদের কাজ নিজেরা অনেকটা পিকনিকের মত। এই ১৫ দিনের ঠান্ডা বাতাস নিজের ভেতরের সিস্টেমটা মনে হয় অনেক পরিবর্তন করে দিবে। দুবাই থাকতে, ঘাড়ের পেছনে ব্যাথা হত। এখানে আসার পর একদিন কেমন আনমনা হয়ে গেলাম, তারপর থেকে এনার্জি ভাল জায়গায়। সকাল ৬টায় বেরুতে হবে, তাই সকাল ৫টায় উঠতে হল।


স্নান সেরে আজ সকাল ৬টা বের হলাম। গাড়ি ১০টা নাগাদ রাস্তার একপাশে থামল। সবাই দোকান সাজানোর মত সব প্রয়োজনীয় জীনিস বার করে নাস্তা বানায় খেলাম। খুব যে ভাল খাবার তা বলব না, এটা ট্যুরের একটা অংশ মাত্র। তরকারীতে যেমন একটু স্পাইস স্বাধ পরিবর্তন করে, এই ধরণের কাজ কর্ম দিনটাকে বেতিক্রম করে তোলে। আমরা আবার রওনা দিলাম বেলা ১টা নাগাদ সাফারিতে পৌঁছালাম। বড় সাইজের উঠ পাখির (Ostrich) রকম ফের দেখলাম। এক একটা পাখি ৫০-৬০ বছর বাঁচে। একটা ডিমের ওজন দেড় কিলোগ্রাম, ১২০ কেজি ওজনের কম প্রেসারে ভাঙ্গেনা। একটি ডিম ২৪টি সাধারণ বড় সাইজের মুরগির ডিমের সমান প্রোটিন এবং পুষ্টিগুন থাকে। কম পক্ষে ২-৩ ঘন্টা চুলার উপর রাখা লাগে পুরো ডিমটা সিদ্ধ হতে। দাম একটি ডিমের ১৪০টাকার মত। মাংসের দাম প্রতি কেজি ১২০টাকা, যেটা অন্যান্য মাংস থেকে অনেক ভাল শরীরের জন্য। সাধারণত ১০ মাস বয়সি পাখিগুলোর মাংস বাজারজাত করা হয়, এর উপর হলে মাংস সহজে সিদ্ধ হয়না।


জীবনে প্রথম ঐ পাখির মাংস পরখ করে দেখলাম। স্বাধ ভালই, গন্ধ বুঝি নাই।


কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম আবার গাড়ি নিয়ে। গাড়ি থামল ঘন্টা খানিক পর বেলা আড়াইটায় Cango Caves এর সামনে। ঢুকার আগে মনে মনে ভাবছিলাম ধুর পুরানো গুহার মধ্যে ঢুকে কি হবে, সময় নষ্ট!!! ২টা ইভেন্ট আছে তাদের একটা হেরিটেজ এবং একটা এডভেঞ্চার। আমি হেরিটেজটা নিলাম, ক্লান্ত ৬০ মিনিটেই শেষ হবে, এডভেঞ্চারটা ৯০ মিনিটের।

ভেতরে ঢুকতেই চোখ কপালে উঠার মত অবস্থা।


গুহাটা ৫.২ কিলোমিটার, ৫ ভাগে ভাগ করা। শুধুমাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে দর্শনাথীদের যাতায়াত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাকি শুধুমাত্র গবেষণা কাজের জন্য। ধারণা করা হয় ৫ মিলিয়ন বছরেরও আগের এই গুহাটি। ছবি দেখলেই কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। অনেক ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দিলেও আমি ঠিক মত ফোকস করতে পারি নাই।


আমি সৌন্দর্য্য দেখতে ব্যাস্ত ছিলাম সেই গুহার। আসতে ইচ্ছা করছিলনা এত সুন্দর প্রাকৃতিক গুহা থাকতে পারে! মানুষও কিভাবে তা সংরক্ষন করেছে, ভাবতেই অবাক লাগছিল।


গুহা থেকে বার হয়ে এক কাপ কফিতে চুমু রেখে ভাবনায় হারিয়ে গেলাম। কাঁদে হাত পড়তেই ফিরে এলাম, ডাক পড়েছে ফিরতে হবে হোটেলে। হোটেলে যাওয়ার আগে পথে সুপার মার্কেট থেকে বাজার সদায় করে আনলাম, রাত্রের খাবার নিজেদের রান্না করতে হবে।


রান্না করলাম, স্নান করলাম, আড্ডা দিলাম এবং খেলাম। এখন লেখা শেষ করেই ঘুমাতে যাব।


ইন্টারনেটের অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েকটা ছবি দিলাম, পরের টা পরে।


শুভ রাত্রী।


সাউথ আফ্রিকা - ৬ষ্ট এবং সপ্তম দিন


গত রাত্রে যেই শহরটিতে এসে পৌঁছেছি তার নাম জেফ্রি ব্যে। শহরটি খুবই সুন্দর পরিপাটি, এখানে আমরা অতিরিক্ত এক রাত থাকবো।


সেন্টমার্টিনে যারা গিয়েছেন, শুধু তাদেরকেই বোঝানো সম্ভব, কি সন্দুর একটি দ্বীপের মত শহর। সমুদ্র তটে আমাদের হোটেল, আমি পেয়ে গেলাম সমুদ্র মুখি দরজার রুমটা। খোলা মেলা, ২ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে। নিজের মধ্যে হারিয়ে গেলাম, সমুদ্রের গর্জন, সুন্দর আবহাওয়া মনের সমস্ত ক্লান্তি থেকে আমায় মুক্ত করল।


এই জায়গাটি সম্পর্কে খুব বেশি বলার কিছু নায়। এক কথায় অপূর্ব।


শহরে ঘুরতে ঘুরতে আফ্রিকান লোকালদের ঘর বাড়ি দেখছিলাম। আমাদের একজন লোকাল গাইড লোকাল বস্তিগুলোতে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল।


আফ্রিকাতে সাদা চামড়া, লাল (ইন্ডিয়ান) এবং কালো চামড়ার মানুষগুলোর মধ্যে প্রথম থেকেই বিভাজন আছে। তার জন্য বিট্রিশ সরকার দ্বায়ী। কালো চামড়ার মানুষরা এখনো অনেক কষ্টে দিন যাপন করছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যথেষ্ট আন্তরিক।


এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা এইডসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। প্রতি ৩ জনের মধ্যে একজন এইডস রোগী। ভয়ানক ভবিষ্যত এই দেশের। ওদের বস্তিগুলো দেখতে আমাদের দেশের বস্তিগুলোর মত হলেও, সম্ভবত ওরা আমাদের দেশের বস্তিগুলোর তুলনায় অনেকটা পরিষ্কার মনে হল।


দেখতে দেখতে ২ টা দিন আমরা কাটিয়ে পরের দিন আরেকটা সিটিতে ফিরব। ঐ সিটিতে আমরা আরেকটা দিন থেকেই পরের দিন জোহনাস বার্গ।


মনটা কেন জানি ভাল নেই, কু’ ডাকছে। এক বন্ধুকে ফোন করে বার বার বলছিলাম কোন একটা বিষয় যেন খবরা খবর রাখে। আমার সিক্স সেন্স ভাল, এটা আমার বিশ্বাস, আমার বিশ্বাস আমায় কখনো ধোঁকা দেয়নি। তাই আমার ভয়টা একটু বারছিল সময়ের সাথে সাথে।


চলবে…

Featured Posts

Recent Posts

Archive

Search By Tags

Follow Me :

  • Blogger Social Icon
  • LinkedIn Social Icon
  • Facebook Basic Square
bottom of page