Australia & Singapore
বছরের একটা ছুটি সিঙ্গাপুর আর অষ্ট্রেলিয়াতে
স্বাভাবিক ভাবেই ছুটি চলাকালীন প্রতিদিনের দিনলিপির একটা কপি আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশনা করায় অভ্যস্ত ছিলাম। এবারের ছুটি শুরুর আগেই বেশ ক’জন বন্ধু বারণ করল এই কাজটা যে না করি। কারণ স্বাভাবিকভাবেই অনেক ক্লান্ত থাকি ঘোরাঘুরিতে, তার উপর একটা মানষিক প্রেসার কাজ করে লিখাটি শেষ করার ব্যাপারটা। তবে বলবনা কাজটা আমায় আনন্দ দেয়না। তবুও যারা আমার ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক, হয়ত ভালবাসেন। ভালবেসে যে কোন অনুরোধ হউক না সেটা নিরানন্দ বাধ্যবাধকতা, শুনতে তো হবেই।
আজকের এই লেখাটা সেই বন্ধুদের জন্য উৎসর্গ করছি যারা আমায় ভালবাসে এবং আমার প্রতি যত্নবান এবং তাদের প্রতি যারা আমার মধ্যে খুত খুঁজে বার করেন। হা হা হা….
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_a91903c9bb634a8f84ec0cc29ffb9e6d~mv2.jpg/v1/fill/w_960,h_636,al_c,q_85,enc_auto/8355e9_a91903c9bb634a8f84ec0cc29ffb9e6d~mv2.jpg)
এবছর আমার ১৭ দিনের একটি ট্যুর পরিকল্পনা ছিল আমেরিকা আর কানাডাকে ঘিরে। “কন্টকি ট্যুর” অপারেটরের একটা প্যাকেজ অর্ডার করা ছিল ৮ মাস আগে। এখনো প্যাকেজটি অব্যবহৃত আছে, তবে সেটা পরের বছরের জন্য তুলে রাখা আছে। আমরা দুবাইতে একটি ব্যাবসা দাড় করানোর চেষ্ঠা করছি, যেখানে লিডারসিপে আছি আমি আর আমার আরেক সতীর্থ। আর্থিক এবং মনস্তাতিকভাবে কিছু মানুষের সাথে অন্যরকম সম্পর্ক তৈরী হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শুরুতে; যদিও আমি তাদের অবস্থানের সমকক্ষ নই। আমার চরিত্রে মধ্যে কিছু বদগুন যুক্ত, তার মধ্যে আক্রমনাত্মক গতি, হউক সেটা কথায় অথবা কাজে। এটা আমি করতাম কিছু বিশেষ কারণে। চাইতাম, আমার খারাপগুনগুলো আমার সতীর্থরা গ্রহণ অথবা বর্জন করুক। যারা আমায় পছন্দ করবে, তারা আমার আত্মাটাকে পছন্দ করবে। প্রতিটি আক্রমনাত্মক ব্যবহারে তারা সব-সময় ভালটা খুঁজে নিত। এই বিশ্বাসটা আমাকে আরো বেশি আত্ম-বিশ্বাসী হতে সহযোগীতা করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এরমধ্যে একজন আল-আমিন ভাই। যখন থেকেই উনি অষ্ট্রেলিয়াতে আছেন তখন থেকেই বলে যাচ্ছিলেন একবার যেন সিডনী ঘুরে আসি। ভাবলাম, এ বছরের ট্যুরটা আল-আমিন ভাইয়ের দেশেই হবে। ট্যুরটা সলো “তড়িৎ” ছিল, যার কারণে পরিবার (মেয়ে-বৌ) কে সাথে নেওয়ার সাহস পেলামনা। প্রথমতঃ ১৬ ঘন্টার ফ্লাইট, তার উপর আবহাওয়ার ঠান্ডা গরমের দৈরাত্ব, সাথে প্রতিদিনের নতুন নতুন পরিকল্পনা এবং সময়ের গড়মিল তাদের হাপায়ে তুলবে। ভাই অবশ্যই খুব করে বলেছিলেন, পরের বারে পুরো পরিবার নিয়ে যাব কথা রইল।
![](https://static.wixstatic.com/media/8355e9_2ae2ae9141684459ab8a8a4646f54807~mv2.jpg/v1/fill/w_960,h_636,al_c,q_85,enc_auto/8355e9_2ae2ae9141684459ab8a8a4646f54807~mv2.jpg)
দেড় মাস আগে থেকে টিকেট, হোটেল বুকিং শেষে ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা করলাম। শুনেছিলাম অষ্ট্রেলিয়ায় কিছু দেশের ভিজিট ভিসায় প্রতিবন্ধকতা আছে, তাই আগে অষ্ট্রেলিয়ারটা আবেদন করলাম। অনলাইন থেকে একটা ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করলাম। ছবি, ফি, নো অবজেকশন লেটার অফিস থেকে, ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্র সহ ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে আসলাম ওয়াফি সেন্টার ভিসা ইউনিটে। জানানো হল ৩ সপ্তাহে আমার ভিসা ইমেইলে চলে আসবে যদি কোন সমস্যা না থাকে। ইনসুরেন্স কনফার্ম করতে হবে এরপর। ভাবলাম আগে অষ্ট্রেলিয়ান ভিসা কনফার্ম হউক তারপর সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য আবেদন করব। একদিন, দু’দিন এবং তৃতীয় দিন যায়, হঠাৎ একদিন সকালে Out Look টা খুলতেই একটা ইমেইল পেলাম অষ্ট্রেলিয়ান এম্বেসি থেকে। আমার চোখ ছানা বড়া, ৩ দিনের মধ্যে অনলাইন ভিসা কনফার্ম করে দিল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই ভিসা সেন্টারে ফোন করলাম। সুন্দর কণ্ঠি এক মহিলা স্বাগত জানাল, আবেদন পত্রের নাম্বার বলাতে খোঁজ নিয়ে দেখল ভিসা এক্সেপ্টেট।
এবার বুঝলাম, আমার অষ্ট্রেলিয়া যাওয়াতে আর কোন বাঁধা নেই যদি ঈশ্বর সহায় থাকেন আর মাঝে কাজের কোন ঝামেলা তৈরী না হয়। তার কিছুদিন পর সিঙ্গাপুর ভিসার জন্য আবেদন করলাম। তারা প্রায় ১০ দিন পর ভিসা লাগাইয়া পাসপোর্ট ফেরৎ দিল। সাধারণত ৭ দিন লাগে ভিসা দিতে, কোন এক কারণে তারা ভিসা দিতে দেরী করল।
২ সপ্তাহ জুড়ে হালকা হালকা ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া শুরু হল। এখানে অবশ্য আমার বৌকে ধন্যবাদ না দিলে চলে না। অন্যবার আমি নিজে বলে দিতাম ব্যাগে কি কি দিতে হবে। এবার সে তৈরী করে দিল, মাঝে মাঝে আমাকে মনে করাই দিল কি কি নতুন করে কিনতে হতে পারে। তাকে আবহাওয়া সম্পর্কে আগেই ধারণা দিয়ে রেখেছিলাম, আরো জানিয়ে ছিলাম সম্ভাব্য কি কি প্রয়োজন হতে পারে। যাই হউক, মজার বিষয় আমি যেদিন যাব, সেই দিনই ব্যাগ হাতে নিলাম, তাও দেখলাম না ভিতরে কি আছে। মাঝে মাঝে, সহধর্মীনিকে বিশ্বাস করাটা দারুন অভিজ্ঞতার। রিস্কটা নিলাম, আমায় সে হতাশ করেনি। ঔষুধ থেকে, চিরুনি পর্যন্ত সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছিল বেগটাতে। এটা আমার জন্য বিশেষ একটা সহযোগীতা ছিল।
আজ ২৫ অগাষ্ট, বেশ কিছুদিন থেকে অফিসের কিছু কাজ ঝুলে আছে, আজ তা হঠাৎ করে মাথার উপর আসা শুরু করল। যেখানে নিয়ন্ত্রণের কোন সুযোগ ছিলনা, কোন রকম অফিসের পাঠ চুকিয়ে বাসায় ফিরলাম একটু আগেভাগে। এসেই ২ ঘন্টার একটা ঘুম, রাত্রে ফ্লাইট, আমি ফ্লাইটে ঘুমাতে পারিনা, এয়ারলাইন্স যতই ভাল হউক না কেন। ফারুক ভাইকে বলে রাখা ছিল রাত ন’টায় বাসা থেকে আমাকে এয়াপোর্টে ছাড়তে হতে পারে। নামাজ শেষে গাড়ি নিয়ে এসে দেখে আমি নিচে অপেক্ষা করছি। আমার মেয়ে অবশ্য বুঝতে পারছিল ব্যাপারটা সুবিধের না, বাপ কোন কাজে যাবে, খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে না। একটু কান্নাকাটি করছিল, বাইরে বেরুতে দিচ্ছিলনা। কোন রকম পাশ কাটিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম।
সারজা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম ৩৫ মিনিটেই। আমার সবরকম এয়ারলাইন্সে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই বেশির ভাগ সময় ইকোনমি ক্লাসটাই বুকিং করি এবং সবচেয়ে সস্তা কারিয়ারটা তো বটেই। আমার পছন্দের ফ্লাইট “কাতার এয়ার ওয়েজ”। সময় এবং সেবার মধ্যে সামজ্ঞস্যতা আছে তাদের প্রতিটি সেবাই। এমিরেটসের সাথে তাদের তুলনা ভদ্রতায় একধাপ এগিয়ে অন্যান্য সেবার সমাতা রেখেও।
যখন অষ্ট্রেলিয়ার টিকেট বুকিং দিব, তখন অনেকটা সময় টিকেট খুঁজেবার করতে ব্যয় করলাম। ডাইরেক্ট ফ্লাইট খুবই খরুচে, প্রায় ৭ হাজার দেরহাম এর কাছাকাছি দুবাই থেকে সিডনি/মেলবোর্ণ। কিছু নির্দিষ্ট ফ্লাইট শুধুমাত্র এই লম্বা সফর করে দুবাই থেকে সরাসরি সিডনি অথবা মেলবোর্ণ।
আমি এত বেশি টাকা দিয়ে টিকেট করার পক্ষপাতি নই, কোন ভাবেই না। সিধান্ত নিলাম বিরতির ফ্লাইট নিব, এবং সাথে মাঝ বিরতিতে আরেটা দেশ ঘুরে আসব। তার মধ্যে অপশন হিসারে সিঙ্গাপুর, মেনিলা, ব্যাংকক, মালেশিয়া আরো কয়েকটা দেশ। সিঙ্গাপুরের কানেটিংটাই একটু বেশি সস্তা। বুক করে নিলাম, সারজা টু সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর টু সিডনি এবং সিডনি টু মেলবোর্ণ রিটার্ণ একই ভাবে। তিনটা আলাদা এয়ার লাইনস ধারাবাহিকভাবে সারজা-সিঙ্গাপুর (কাতার এয়ার), সিঙ্গাপুর-সিডনি (স্কুট এয়ার) এবং সিডনি-মেলবোর্ণ (ষ্টার এয়ার)।
বস জিজ্ঞাসা করছিলেন, কিরে আরবাব (মজা করে সম্বোধন) টাকা তো বেশ খসিয়েছ এয়ার টিকেটে নাকি? বসকে প্লাল্টা প্রশ্ন ঠিক কতটাকা আমি খরচ করেছি তুমি ধারণা করছ? সে ধারণা করছিল ৬-৭ হাজার তো বটেই। হাসছিলাম, বলল ব্যাপার কি? বললাম ৩,৫০০ দেরহাম শুধু। সে জানতে চাইল আমি কি আমার হাতকে পাখা বানিয়ে পাখির মতই উড়ে সিডনি যাচ্ছি কিনা? এত সস্তাতো কোন ভাবেই সম্ভব না। বোঝালাম একটি ফ্লাইটে সরাসরি যাত্রায় খরচ হবে দিগুন, মাঝ পথে বিরতি এবং আলাদা আলাদা ফ্লাইটের রির্টান টিকেট। খরচ বাচাঁতে প্রতিটি ডেসটিনেশন থেকে আমি রিটার্ন ফ্লাইট নিয়েছি এবং আলাদা আলাদা এয়ার লাইনস ব্যবহার করেছি। দেখালাম ইনভয়েস, তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য।
ব্যাপারটা ঠিক এরকম – সারজা থেকে সিঙ্গাপুর ২৫ অগাষ্ট রাত ডিপাচার, ৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে সারজা রির্টান ১,৬০০ দেরহাম। সিঙ্গাপুর থেকে সিডনি ২৮ অগাষ্ট রাত ডিপার্চার, ৩ সেপ্টেম্বর রিটার্ন ১,৬০০ দেরহাম। সিডনি থেকে মেলবর্ণ ৩১ অগাষ্ট ডিপার্চার এবং ২ সেপ্টেম্বর রিটার্ণ। প্রতিটি এয়ার লাইন্স আমাকে প্রায় ৩০-৩৫% ছাড় দিয়েছে রির্টান ফ্লাইট বুক করাতে। জাষ্ট একটু সময় ব্যয় করে খুঁজে বার করতে হল এই যা।
সারজা থেকে দোহা ফ্লাইট ৪৫ মিনিটেই ল্যান্ড করল। মাঝখানে প্রায় ২ ঘন্টার বিরতি সিঙ্গাপুরের ফ্লাইটে, একটা কফি নিয়ে বসলাম কাউচে (সোফার মত)। কল দিলাম দোহার এক ছোট ভাইকে, যতবারই আমি দোহা হয়ে যাই তাকে একবার নক করার চেষ্ঠা করি। সে ফোন ধরলনা; বেশ কিছুক্ষণ পর ফোন করল, কথা হল, ব্যস্ত ছিল কোন একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে।
নির্দিষ্ট সময় কাউন্টারে এসে বোর্ডিং নিতে আসলাম, এয়ার ওয়েজ অফিসার বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে দুঃসংবাদ দিলেন। তাদের একটি এয়ার ক্রাফটে ত্রুটি তাই ফ্লাইট আরো ২.৫ ঘন্টা দেরি হবে। আমাদের এয়ারপোর্ট লাউঞ্জয়ে বিশ্রামের অনুরোধ করেলেন। কিছুটা বিরক্ত ছিলাম, ভাগ্যভালো আমার সিডনি ফ্লাইটা পরের দিন সন্ধ্যায়। লাউঞ্জে খাবার ব্যবস্থা করে দিল। খাবারের ব্যাপারটা বিরক্তিকর বিশেষ করে প্রতিটি লম্বা ফ্লাইটে বেশ ক’বার খাবার দেয়। এতে পেটের অবস্থা খুব খারাপ হয়। খাবারের ঘ্রাণটা ইন্দ্রীয় খাবার থেকে দূরে থাকতে দেয়না। এমন না আমি চাইছি না আমি খাবনা, ইন্দ্রীয় টা খাবার খাবনা কথাটা কেন যেন গ্রহণ করতে পারেনা।
ভোর ৪:৩০ মিনিটে ফ্লাইট পেলাম, পোঁছালাম সন্ধ্যা ৬টায় সিঙ্গাপুর সময় ৯ ঘন্টার লম্বা উড়ে চলা। ২-৩টা ফিল্ম দেখলাম, কিছুক্ষণ বই পড়লাম। ঘুমানো চেষ্ঠা করলাম, কিন্তু হলনা। দুবাই থেকে ৪ ঘন্টার সময়ের ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুরের লোকাল ঘড়ি, উদাহারন যখন দুবাইতে দুপুর ১টা তখন সিঙ্গাপুরে বিকাল ৫টা।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই মেট্রো ধরে মূল শহরে এলাম, তারপর টেক্সিযোগে হোটেলে। একটা গোসল দিলাম, যদিও ফ্লাইট থেকে এসেই গোসলটা শরীরের জন্য ভাল নয়। আমাদের এক বড় ভাইয়ের বৌ এয়ার লাইন্সে জব করেন, টিপসটা ওখানে থেকেই পাওয়া। গোসল সেরে বের হলাম, মাথাটা ঘুরছে প্রায় ১৭-১৮ ঘন্টা হয় ঘর থেকে বার হলাম। কিছুক্ষণ চলার পর রেষ্টুরেন্ট থেকে খেলাম হালকা। পরে ঘুমাতে আসলাম, ৮-৯ ঘন্টার লম্বা ঘুম শেষ সকাল ৯ টা ঘুম থেকে জাগলাম। গোসল টা সেরে বার হলাম। মোবাইলে Visit a City app টা ডাউনলোড করা ছিল। একটা টেক্সি ভাড়া করে Chinatown Heritage Centre এর সামনে নামলাম। শুরু হল আমার হাটার দিন।
৩ মিনিট হাঁটতেই Sri Mariamman Temple, একটু সামনে যেতেই Buddha Tooth Relic Temple ৮ মিনিটের পাঁয়ে চলার দূরত্বে। ১৭ মিনিট হাটতেই পেলাম Asian Civilizations Museum। আধা ঘন্টা কাটিয়ে আবার চললাম ১৪ মিনিট পথ চলা, পেলাম Merlion Park। সাথে বেশ কিছু সুন্দর রেস্তোঁরা একটা এক্সপ্রেসো অর্ডার করে ঠান্ডায় বসলাম। বাইরে গরম, মনে হয় ২৮ ডিগ্রির কাছাকাছি। জিরিয়ে নেওয়ার মত এমন ভাল একটা সুযোগ হাত ছাড়া করা যায়না। তাছাড়া সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। একটু পর খাব, আরেকটু পর এই করতে করতে প্রায় ২ ঘন্টা হাটলাম। সকালে চা অথবা কফি কিছু-একটা না নিলে মাথাটা ব্যাথা করে। তাই এই রেষ্টুরেন্টটা অনেকটা স্বত্বি দিল। ওখানে থেকে বের হলাম, একটা গিফট শপে ঢুকলাম, কিছু সুন্দর কাষ্টমাইজ ইউনিক গিফট আমার অফিস ডেস্ক এর জন্য নিলাম। বাথরুমটা ওখানেই সারলাম, শরীর টা একটু ভাল অনুভব করছিলাম। এবার এপ’টা ঘেটে আরেকটা জায়গা দেখব বলে জিপিএস ট্রেক করে চলা শুরু করলাম।
Lau Pa Sat Festival Pavilion-কে সিঙ্গাপুরের খাবার ঘরে বলে অনেকে। সব রকমের খাবার একটি জায়গায়। সবটা ষ্ট্রিট ফুড, থাই, ইন্ডিয়ান থেকে ইউরোপীয়ান মোটামুটি সবই আছে। ২০ মিনিট সময় লাগল পাঁয়ে চলে পৌঁছাতে। হালকা কিছু খেলাম এবার চলা শুরু করলাম Marina-এর দিকে, ২০-২৫ মিনিট লাগবে পৌঁছাতে। একটি টেক্সি নিলাম ৫-৭ মিনিটেই পৌঁছালাম। Art Science Museum এর সাথে একটা সপিং মল আছে, ভেতটা অনেকটা দুবাই মলের মত, কিন্তু ছোট। Hotel Marina এর অপর পাশে, প্রায় সব রকম দামি ব্রান্ডের দোকান এখানেই। ড্রাই স্কি’তে বাচ্চারা খেলছিল। প্রায় ঘন্টা ২ ঘুরলাম, ফুড কোর্টে গেলাম খেতে। সিঙ্গাপুরের স্পেশাল ডিস রাইস চিকেন, স্বাধটা ভালই। পুরো বেশ ক’টা মুরগি ভিনেগার আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইগ্রিডিয়েন্ট দিয়ে চামড়া সহ কম আগুনে সিদ্ধ করে লম্বা সময় ধরে। সেই মুরগির পানি দিয়ে ভাতটা রান্না করে। ভাতটা গরম আর মুরগির মাংসটা ঠান্ডা পরিবেশন করাটা এদের স্পেশালিটি। আমার খুব একটা স্পেশাল মনে হয়নি। তাদের খাবারগুলো টেষ্ট করাই ছিল উদ্দেশ্য।
আবার পথ চলা শুরু করলাম ১৫ মিনিট হাঁটতেই পেয়ে গেলাম Gardens By the Bay। এটা দারুন একটা জায়গা আমার পছন্দ হয়েছে, প্রায় ২ ঘন্টা ছিলাম। Bay East Garden, Super tree Grove, Cloud Forest dome তিনটি জায়গা একটার চেয়ে অন্যটা দেখার মত। যারা প্রকৃতি ভালবাসেন তাদের জন্য জায়গাটা স্বর্গ।
সেখান থেকে টেক্সিতে Singapore Flyer, ৭ মিনিটের ড্রাইভে পৌঁছালাম। সিঙ্গাপুরকে উপর থেকে দেখবো। এই ফ্লাইয়ারটি লন্ডন ফ্লাইয়ার থেকে ১.৫গুন বড়। উপর থেকে পুরো সিঙ্গাপুরকে দেখলাম। আবার ক্ষুদা পেল, ইচ্ছা কাঁকড়া খাব। গেলাম একটা নামি রেষ্টুরেন্টে। বললাম তোমাদের সবচেয়ে বড় কাঁকড়াটা দাও। আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল; আমি একা খাব কিনা? পরিবেশকের প্রশ্নে খটকা বাঁধল, জানতে চাইলাম সাইজ কত। উত্তর বড়টা ২.৫ কেজির উপর। ভয় পাইলাম, জানতে চাইলাম ছোটটার সাইজ কত? বলল কম পক্ষে ৮-৯ শত গ্রাম। ছোটটাই অর্ডার দিলাম। কাঁচি ছুরি সব দিয়ে দিল স্পাইস কাঁকড়া কাটতে। দারুন স্বাধের, সিঙ্গাপুরে এই ব্যাপারটা সারাজীবন মনে থাকবে। নিজের অর্ডারে নিজেই ভয় পেয়েছিলাম।
অনেক ক্লান্ত, প্রায় ৫টা বাজে, মোবাইলে চার্জ প্রায় শেষ, মনে হয় ৩ শতাংশ বাকী আছে। একটি টেক্সি ধরে হোটেলে ফিরলাম। গোসল দিয়ে আবার ২ ঘন্টার ঘুম। রাত ২টাই ফ্লাইট টু সিডনি। ১২:৩০ মিনিটে এয়ারপোর্ট থাকতে হবে। রেডি হতে সময় লাগবে, সব হিসাব মিলিয়ে মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ঘুমতে চেষ্ঠা করলাম। বিছানায় শুতেই মরার মত ঘুম, ফিট বিট ঘড়িতে দেখলাম ১৮ কিলোমিটার হেঁটেছি। ৫২০০ কেলোরি বার্ণ করেছি। এই রকম ঘুমানোটা স্বাভাবিক। ঘুম থেকে উঠেই মাথা ভন ভন করছে। কাপড়ের ব্যাগ গুছাইয়ে গাঁয়ে হালকা পানি দিয়ে আবার রেডি হলাম।
টেক্সিতে বসতে রাত ১১:৩০ মিনিট। এক ইন্ডিয়ান ড্রাইভার পেলাম, পার্সপোর্ট সিঙ্গাপুরের। ওখানের পারমানেন্ট বাসিন্দা। অনেক গল্প করলাম, ৪০ মিনিটের মাথায় এয়ার পোর্টে নামিয়ে দিল। চেক ইন করলাম, হাতে এখনো বেশ সময় বাকি। হাটলাম কিছুক্ষণ এয়াপোর্টের মধ্যেই। কিছু হালকা বাজার বাকি ছিল, গিফট। শেষ বোর্ডিং হল ফ্লাইটে। নির্ধারিত সময়ে উড়াল ধরল। ঘুমানো যাচ্ছিলনা, যথেষ্ঠ সুযোগ থাকার পরও ঘুম আর আসেনা। বেশ কিছুক্ষণ বই পড়লাম, শেষে মোবাইলে গান শুনব বলে ফোন অন করতেই বুঝলাম ওয়াফাই অন। ১৫ মিনিট ফ্রি ইন্টারনেট সার্ফ করে দেখলাম দারুন স্পীড। ফ্লাইটে এত ভাল গতি ইন্টারনেট অভাবনীয়। ৩ ঘন্টার একটা প্যাকেজ নিলাম, অবশ্য ১৫ ডলার খরচ আসলেই কম না। তারপরও সময় কাটানোর এর চেয়ে ভাল সুযোগ পেলামনা।
বাসায় মেয়ের সাথে কথা হয়নি, ক্লান্ত ছিলাম। ইমো থেকে বাসাই ফোন দিলাম, ভিডিও কল, দারুন স্পিডে অনেকক্ষন মেয়ের সাথে ভাল সময় কেটে গেল। মাঝে ২ বার খেলাম। ৮ ঘন্টার ফ্লাইট উড়ে নামল, সিডনিতে। ভাইয়াকে কল দিচ্ছিলাম, ইমিগ্রেশন ডোকার আগেই। কেন যেন কল করা যাচ্ছিলনা মোবাইল রোমিং চালু থাকার পরেও। ইমিগ্রেশন লাইনে দাড়ালাম। অফিসারের ব্যাবহারে মুগ্ধ হলাম, আতিথিয়তা পেলাম অনেকটা স্বাগতম জানানোর মত। বের হতেই, আল আমিন ভাই মেয়ে সহ অপেক্ষায়।
সালাম-দোয়া করার পর উনার গাড়িতে বসলাম, দেখলাম ভাবী গাড়িতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ভাইয়াদের একটা দাওয়াত আছে, ভাইয়া সরাসরি দাওয়াতে নিয়ে গেলেন। দাওয়াতে প্রায় ঘন্টা ৪ সময় কাটিয়ে বাসায় ফিরলাম। আবার গোসল করলাম। ভাইয়ার সাথে বের হব সিটির আশে পাশে ঘুরে আসব। গোসল করার পর সমস্ত ক্লান্তি কেটে গেল। আবার মেট্রোতে চড়ে Circular Quay আসলাম। মাথা ব্যাথা করছিল, বাইরে ১৫ ডিগ্রির মত ঠান্ডা। সিডনি অপেরা হাউসের পাশে বেশ কিছুক্ষণ থেকে ভাইয়ার সাথে একটা এক্সপ্রেসো কফি নিলাম। খুবই কড়া ক্যাফেইন, ব্রেইনে সোজা একটা ধাক্কা দেয় এই কফিটা। মাথা ব্যাথার টনিক হিসবে দারুন কাজ করে, নিম তিতা। অভ্যস্ত হয়ে পড়লে এই স্বাধটাই দারুন লাগে।
ভাইয়া বেশ মজার লোক, অনেকক্ষণ কথা বলতে বলতে ফেরিতে চেপে বসলাম দু’জন রাতের সিডনি দেখবো বলে। অনেক সুন্দর একটা শহর, অনেক সুন্দর আবহাওয়া। ক্যামেরার কিছু ছবি রঙ্গিন রঙ্গে রাঙ্গানো। আমার ভাগ্য বরাবরের মত সব জায়গায় ভাল শুধুমাত্র আবহাওয়ার ক্ষেত্রে। সিঙ্গাপুরে, দিনের কোন একটা সময় অবশ্যই বৃষ্টি হয়, আমি যেদিন গেলাম শুধু সেই দিন বৃষ্টি হয়নি। তাই প্রায় ৭৫% ভিজিটিং স্পট ঘুরে বেড়িয়ে আসলাম। সিডনিতে ক’দিন খুব ঠান্ডা পরছিল, আমি যেদিন আসলাম ঠান্ডা কমে এসেছে।
ভাইয়া এই শহরটির নাম দিয়েছেন লেইট ব্যাক সিডনি। সন্ধ্যা ৬টার পর কোন দোকান খোলা পাওয়া যায়না শুধুমাত্র ঔষধ এবং খাবারের দোকান ছাড়া। এইটা একটা মহা বিপদ, প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট কাজের সময় লাইসেন্স এ বেঁধে দেওয়া আছে, তার এক মহুর্ত্ব দেরি করে বন্ধ করা মানেই বড় অংকের ফাইন গুনতে হয়।
রেল, মেট্রো, ফেরি এবং অন্যান্য ট্রান্সপোর্ট প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত ভালই চলে। রাত ১২-৩টা পর্যন্ত কিছু আলাদা বাস চলে এবং রাত ৩টার পর থেকে আবার স্বাভাবিক। এতে মানুষের চলাফেরায় তেমন কোন সমস্যা হয়না। সময় মেনে শহরটি চলে তার আপন গতিতে। ভাইয়া এই শহরটিকে লেট ব্যাক বলেন, কারণ সিঙ্গাপুর আর দুবাইয়ের সাথে তুলনা করলে সার্ভিস ২৪/৭ গতি এখানে অনেকটা ম্লান। ৪০ ঘন্টার উপর কাজ করার নিয়ম নাই সপ্তাহে, সরকার কঠোর জনগণের মানষিক এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায়।
আজকে প্রচন্ড ক্লান্ত, বাইরে ভাইয়ার সাথে ডিনার সারলাম সালম্যান মাছের ফ্রাই আর ভেজিটেবল দিয়ে। কত্ত রকম যে কথা হল। আল আমিন ভাই বয়সে আমার প্রায় ১০ বছরের বড়। গত দু’বছর আগে ভাবতাম ৪০ বছর পরিশ্রম করব এরপর রিটায়ারমেন্ট এ চলে যাব। উনাকে দেখার পর কিছু সিন্ধান্ত নতুন করে পরিবর্তন করলাম। সেই থেকে উনি একটি অপ্রকাশিত বিষয়ে ইনস্পায়ার্ড পারসনাল হিসাবে মনে জায়গা করে নিয়েছেন। আমার জীবন হয়তঃ আরো খুব ছোট গন্ডির মধ্যে থেকে যেত; যদি না কিছু বন্ধু / বড় ভাইয়ের সাথে পরিচয় না হত। তারাই পরিস্থিতি এবং বিষয়বস্তু প্রয়োগীক রোল মডেল। মাঝে মাঝে ভাবি আর মনে মনে হাসি, নিজের কোন গুনই নাই, সব অন্যদের কাছ থেকে ধার করা। ও হ্যাঁ একটি গুন মনে হয় আছে, অন্যদের গুন বা সুবিধা জনক চরিত্র নিজের ভেতর তৈরীতে পারদর্শীতা।
সকাল ৯ টা ঘুম ভাঙ্গল মাথা ব্যাথায়। আজ সিডনীতে দ্বীতিয় দিন। আল-আমীন ভাই সকালে অফিস চলে গেলেন, ভাবীর একটা ক্লাস ছিল, বাচ্চাটাও স্কুলে আমি একা। খাবার টেবিলে নাস্তা সাজানো, আজ নিজের বানানো খাবার খেতে ইচ্ছে হল। বাইরে ঠান্ডা ১২ ডিগ্রীর কাছাকাছি। মুখ হাত ধুঁয়ে রান্না ঘরে ঢুকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী খুঁজে বার করলাম। একটা লেবানীজ ডিস রান্না করব, খুবই সোজা। ২টা আলু নিলাম, হালকা করে ধুঁয়ে গোল করে ফালি করলাম একটু মোটা রেখেই। মসলা মাখিয়ে ওভেনে রাখলাম সময় ঠিক করে। ডিম নিলাম ২টা, গুললাম লবণ দিয়ে। আলুগুলো ওভেন থেকে টোষ্ট হওয়া অবস্থায় অলিভ ওয়েলে মাখানো গরম তাওয়াতে একটু ছেকে ডিমগুলো ঢেলে দিলাম, মিনিট পাঁচ এদিক ওদিক করে নামিয়ে রাখলাম। মাঝখান থেকে চা উঠিয়ে দিয়েছিলাম তাও রেডি। খাবার শেষ করলাম, কাপড় পরিবর্তনের পর ঘর বন্ধ করে রাস্তায় বের হয়ে পড়লাম। আজ একা একা হাঁটব রাস্তায়। উদ্দেশ্যে Darling Harbour এর আশে পাশের এলাকা পাঁয়ে হাঁটা। Wiley park মেট্রো ষ্টেশনে কিছুক্ষনের মধ্যে ট্রেন চলে আসল, ভাইয়ার বাসা থেকে মেট্রো ষ্টেশন ৭ মিনিটের হাঁটা পথ। রাস্তা পরিপাটি, অনেকটা ছবির মত। ট্রেনে চেপে বসলাম, চোখে এখনো ঘুম, একটা কফি খুবই দরকার। আদো আদো ঘুম নিয়ে Town hall ষ্টেশনে এসে পৌঁছালাম। Gloria Jens এ ঢুকেই একটা কফি, খানিকটা ছোখ বন্ধ করেই। কফি শেষ করে Visit a city এপ টা খুলে দেখলাম। কাছাকাছি কয়টা জায়গা আছে যেগুলো হেঁটে যাওয়া সম্ভব। প্রায় ৬টা জায়গার সন্ধান নিয়ে পথ চলা শুরু করলাম। বেলা ২টা, পেঁটে এখনো ক্ষুদা লাগেনি। মোবাইলে রোমিং ইন্টারনেট চালু আছে, গতি ঠিক মত পাচ্ছিলামনা।
হাঁটা শুরু করলাম Darling Harbour দিয়ে, তার পর Sea Life Aquarium, Sydney Wildlife World, Queen Victoria Building, Sydney Tower দিয়ে ঘুরা শেষ করে খেতে বসলাম একটা জাপানী রেষ্টুরেন্টে। বার্গার এর একটা কম্বো অর্ডার করে খেলাম। খুব একটা খারাপ না হলেও খুব একটা ভালও না, তবে খালি পেটে পানি অমৃত মনে হয়। এবার হাঁটা শুরু করলাম James Church এর দিকে তারপর St. Mary’s Cathedral ঘুরে আবার Darling Harbour চলে আসলাম। সেখান থেকে ফেরিতে চড়ে বসলাম, এক ইন্ডিয়ান ছেলে সাথে পরিচয়, ইউএস এ তে থাকে। এক সপ্তাহে ছুটিতে আসল। অনেকক্ষণ ফেরিতে আড্ডা দিলাম, সে অবশ্য বেশ কিছু ছবিও তুলে দিয়েছিল আমার ফেরির মধ্যে। ঠান্ডার চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ভাইয়া মেসেজ দিয়ে জানাল অফিস শেষে আমাকে circular quay এর ফেরির ষ্টেশন থেকে উঠায় নিবেন। মাঝে ঐ ছেলের সাথে কফি শেয়ার করলাম। ভাইয়া এসে হাজির, হাঁটতে হাঁটতে আজকের ঘুরাঘুরির ছোট একটা বর্ননা দিলাম। আজ একটু আগেই বাসাই ফিরব, শরীরটা মেজ/মেজ করছে। ভাইয়ার সাথে ট্রেনে ফিরছিলাম, সেখানে একটি বাঙ্গালী বাজার আছে Lakemba ষ্টেশনের কাছেই। ভাইয়ার সাথে ঐ বাজার থেকে বেশ কিছু সদায় করে বাসায় ফিরলাম।
ভাবী অনেক পদের খাবার রান্না করে অপেক্ষা করছিলেন, আসতেই গপাগপ খাবার গুলো সাবাড় করলাম। অবশ্য মনে রাখার জন্য ছবি উঠিয়ে রাখলাম। আরো কিছুক্ষণ আড্ডাদিয়ে ঘুমায়ে পড়লাম। ইচ্ছা আছে কাল সকালে উঠে Blue Mountain এর দিকে যাব। সকালে খুব ক্লান্ত অনুভব করলাম, গতকাল প্রায় ১৫ কিলোমিটার হেঁটেছি। মাজা ব্যাথা করছে। বেলা এগারোটায় ঘুম থেকে জেগে বাইরে আসতেই দেখলাম ভাবী সকালের নাস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। উনি সম্ভবত নিজেও নাস্তা করেন নায়। তাড়াহুড়ো করে বাথরুম সেরে বসে পড়লাম উনার সাথে খেতে। ভাবী বরাবরই একটু কম কথা বলেন, আমি অবশ্য কথাবাজ, কেউ চুপ করে থাকবে সামনে, সেটাতে আমার প্রচন্ড আপত্তি। ভাবীর প্রিয় কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করতে সময় লাগল ১৫ মিনিট। ভাবীও বলা শুরু করলেন। মাঝে মাঝে ভাইয়া খবর নিচ্ছিলেন আমি নাস্তা করেছি কিনা, কিছু প্রয়োজন আছে কিনা? বেলা ১টার দিকে বের হলাম, বুঝলাম আজ Blue Mountain এ যাওয়া সম্ভব নয় সময় সল্পতার জন্য। দ্বীতিয় পন্থা অবলম্বন করলাম, প্রকৃতির কাছে যাব ঠিক করাই ছিল, তাই Bondi Beach এর দিকে চলে গেলাম। চোখ ধাঁধানো সোন্দর্য্য, পরিস্কার পানি, পাথর সমুদ্র সব মিলিয়ে অন্যরকম। প্রায় ৪ ঘন্টা ছিলাম। বিকাল প্রায় ৫:৩০ দিকে অনিচ্ছার সর্ত্বেও ফিরতে বাস ধরলাম, যেটি Darling Harbour কাছে এসেই থামে। ভাইয়া আমার সাথে ওখানেই দেখা করবেন। আজও ভাইয়ার সাথে ফিরব। দুবাইতে ফোন দিব, সময় দেখলাম ৬ বাজতে ১৫ মিনিট বাকী। এখন দুবাই সময় দুপুর বারোটার কাছাকাছি, কল দিলাম মেয়েকে, কিছুক্ষণ কথা হল। ভাইয়াকে পেলাম ৬ টার দিকে, আমি Subway তে বসে তখন সেন্ডুইচ চিবুচ্ছিলাম। সারাদিন খাই নাই, দুরদান্ত ক্ষুধার্থ। ভাইয়ার সাথে দেখা হওয়াতে আরেকবার খেলাম। আবার আড্ডা দিতে দিতে বাসায় ফিরলাম।
আজ রাত্রে ভাইয়ার এক মামার বাসায় দাওয়াত, পাশের বাসা, তাই লুঙ্গি পড়েই গেলাম। সেখানেও সেই খাবার দাবারের ব্যাবস্থা। ভুঁড়ি ভোজ শেষে ঘুমাতে যাব, এলার্ম সেট করলাম সকাল ৫টার। আগামী কাল Melbourne যাব, সকাল ৭:৩০ এ ফ্লাইট। ভোর ৪টায় উঠে ব্যাগ গুছালাম। ভাইয়া আমার জন্য সকালে উঠে গেছেন, মেট্রোর কাছেই কার ড্রপ করবেন বলে। উঠেই ভাইয়ার সাথে ষ্টেশন পর্যন্ত গিয়ে বিদায় নিলাম। Wiley Station থেকে Central Station গিয়ে এয়ারপোর্টের ট্রেন পরিবর্তণ করলাম। আন্ত বিমানের ষ্টেশনে ভিড় কম, বেগ পেতে হলনা বোর্ডিং করতে। বোর্ডিং শেষ বোধদয় হল সকালের নাস্তা হয়নি। খেলাম গলা পর্যন্ত এক রেষ্টুরেন্ট থেকে। তারপর দৌড় সোজা প্লেনের গেইট পর্যন্ত, কারণ ফাইনেল কল দিয়ে দিয়েছে কবে আমি ঠিক খেয়াল করিনি। একটু হলেই মিস করতাম ফ্লাইট।
ফ্লাইট যথা সময় ছাড়ল এবং ঘন্টা খানেক এর মধ্যেই Melbourne শহরের Avalon এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। বের হলাম, বাসের টিকেট নিয়ে বসলাম বাসের সামনের সাড়িতে। শহরটাকে বাসে বসে দেখতে সুবিধা হয় যদি সেটা সামনের সাড়ি হয়। ৪৫ মিনিটের মধ্যে Town Centre এর কাছাকাছি আমাদের ছাড়ল। সুন্দর শহর, আমার সম্ভবত Melbourne শহরটাকে একটু বেশি পছন্দ হয়েছে। আকাশটা মেঘলা, গুগল ম্যাপ এ দেখলাম আমার হোটেলটা এখনো প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে আছে। ট্রাম থেকে ২ ষ্টেশন, ট্রামে চড়লাম ৫ মিনিটের মধ্যে হোটেলের সামনে এসে হাজির। এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হওয়ার কথা। মজার বিষয় আমার রুমে চেক ইন করে উনি বসে আছেন। নাম নেওয়ার একতিয়ার না থাকায় জানাতে পারছিনা বড় ভাইটা কে। ১০-১৫ মিনিটের মিটিং শেষে উনাকে এয়ার পোর্টের কাছে টেক্সিতে ড্রপ করে হোটেলে ফিরলাম। একটু গরম পানিতে গোসল করে নিজেকে রিচার্জ করে নিলাম। শুনলাম এই শহরে দিনে প্রায় ৩ টি ঋতু, গরম, ঠান্ডা এবং বৃষ্টি আর এইসব একদিনেই ঘটে।
বার হয়ে গেলাম। মাঝে বেশ কয়েকবার প্রাঞ্জল এর সাথে কথা হল। Melbourne আসার বড় একটা কারণ তার সাথে দেখা করা। একদিন তার বাবা বিমল স্যারের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল। কথার কথা বললাম, আমি প্রাঞ্জলকে দেখে আসব অষ্ট্রেলিয়া গেলে। আমি যাচ্ছি সিডনী, সে থাকে মেলবর্ণ। কথাতো কথা, বলেছিলাম প্রাঞ্জলকে দেখে আসব, তাতো আসতেই হবে। Melbourne শহর দেখতে বের হয়ে পড়লাম, সহায় Visit a City এপ, ঘুরলাম শহরটাকে; অনেক কাছ থেকে দেখলাম। Water Taxi তে ঘুরলাম শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বৃষ্টির দেখা পেলাম না, ভাগ্যটা খুবই ভাল, যে ঠান্ডা পড়ছে বৃষ্টি হলে তো জমে যাব।
৫টার দিকে প্রাঞ্জল ফোন দিল, সে হোটেলের খুব কাছেই আছে। পার্কিং সংকটের কারণে সে সম্ভবত বিব্রত। সিগনেল এর পাশ ঘেষে আসতেই তার গাড়িতে চড়ে বসলাম। সে নিয়ে গেল Melbourne Star Observation Wheel এ। প্রায় ৪ বছর পর দেখা, সে একটুও বদলায়নি। কলেজে যেমনি দেখতাম সেই তেমনটি থেকেই গেছে। দু’জনে কফি নিলাম, পুরানো দিনের অনেক কথা স্মৃতি চারণ করলাম। একটা সময় Melbourne Star Observation Wheel চড়ে বসলাম, সে আগে থেকেই টিকেট কেটে রেখেছিল। উপর থেকে Melbourne টাকে দেখলাম। ওর সাথে হাটতে শুরু করলাম, অনেক জায়গায় ঘুরালো কথা বলতে বলতে নামগুলো খেয়াল রাখতে পারিনি। একটা বিচেও নিয়ে গিয়েছিল, সর্বশেষ ওর বাসায় খেতে গেলাম, দারুণ রান্না করে ছেলেটা। বেশ কয়েক পদ দিয়ে খাওয়ালো, ওর হাতের রুপ চাঁদা মাছ আর স্পিনিচের পাতার সাথে মাংসের রান্না, শুটকি সব মিলিয়ে দারুন খেলাম। স্যার ইমোতে ভাগ্যক্রমে ফোন দিলেন, আন্টি আর স্যারের সাথে কথা হল (প্রাঞ্জলের মা-বাবা)। প্রাঞ্জলের বাবা মুক্তি এনজিও এর এক্সিকিউটিভ কাউন্সির একজন সদস্য, যে মুক্তি আমায় দাঁড়ানোর হতে প্রথম সিড়ি ছিল। উনাকে তখন থেকে স্যার ডাকতাম, ঐ ডাক এখনো একই রকম রয়ে গেল। প্রাঞ্জলদের বাসায় বিশেষ বিশেষ কারণে মাঝে মধ্যে যাওয়া হত। প্রাঞ্জলের মা মানে আন্টির সাথে তখনই ভাল একটি পরিচয় হয়। উনার ব্যবহারে বরাবরই মাতৃসুলভ। আন্টির সাথেও খাবার শেষ ইমোতে কুষল বিনিময় হয়। অনেক রাত হয়েছে প্রায় ১২টা, প্রাঞ্জল আমায় রেল ষ্ট্রেশন পর্যন্ত নামিয়ে দিল। ২০ মিনিটেই হোটেলের সামনে এসে পৌঁছালাম, ঘুমাতে গেলাম। দুপুরের কোন এক সময় Grate Ocean Road trip এ যাবার জন্য অনলাইনে টিকেট কেটে রেখেছিলাম, যেন পরের দিন ভোরে ঐ দিনটি উপভোগ করতে পারি।
সকাল ৬টা ঘুম ভাঙ্গল, রেডি হয়ে রাস্তায় এসে অপেক্ষা করলাম ঐ ট্রিপের বাসের জন্য। বাস ১৫ মিনিট পর আসল। চেপে বসলাম ২৪ সিটের বাসটাতে, ২০ জন ছিল আজকের ট্রিপে। সবাই সবার সাথে পরিচিত হলাম। ড্রাইভার কাম গাইডটা লোকাল অষ্ট্রেলিয়ান। সেই মজার একটা ছেলে, বয়স ২৫-২৬ বছরের বেশি হবে না, সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অনর্গল কথা বলল। এত এনার্জি ভাবতে অবাগ লাগছিল, লোকালরা একটু গম্ভীর এবং অলস্ এটা আমরা সবাই জানি অথবা মনে করি। তাদের ব্যাপারটাই অন্য রকম, হতে পারে সে তার কাজটাকে নিয়ে খুবই খুশি, ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা একটা ছেলে ড্রাইভার এর কাজ করছে, আমাদের দেশে হলে তো সবাই ছি ছি করত। কাজকে ছোট/বড় করা আমাদের এশিয়ানদের স্বভাব।
কথা দিলাম, জীবন থেকে এমন একটি বছর বের করব, যে সময়টাতে দেশে দেশে ঘুরে মানুষের জুতা পলিশ, রেষ্টুরেন্টে বয় বা রান্না ঘরের রসুই, কুলি অথবা কোন জমিতে হাল চাষ, হয়তঃবা নদীতে নৌকা বেয়ে জীবনটাকে জানব। একটু যাচাই করে দেখার চেষ্ঠা করব কোন কাজটি ছোট? তার আগে মন্তব্য নাই বা করলাম। বুঝার চেষ্ঠা করব কোন কাজে আমার জাত যায়, কোন কাজে আমার প্রিয় মানুষরা আমার পরিচয়ে পরিচিত হতে লজ্জ্বা বোধ করেন? জীবনের একটা বছর নিজের লৌকিক বলয় থেকে বার হয়ে যাব, এক বছর কারো সাথে কোন যোগাযোগ থাকবেনা।
Grand Ocean Road সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার দরকার নেই। ইতিহাস একে নিয়ে অনেক কিছুতে পূর্ণ করেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শহীদের স্বরণে স্থায়ী স্মৃতির রুপান্তর এই রাস্তাটা। যুদ্ধ থেকে ফিরা সৈনিকদের পরিশ্রমে তৈরী এই পাহাড় আর সমুদ্র ঘেরা রাস্তা। যুদ্ধ ফেরৎ সৈনিকদের পূনবাসন অথবা কর্মসংস্থানের জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর রাজ্য কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা এই পরিকল্পনা তৈরী করেন। সেই হিসাব অনুযায়ী কাজটি শুরু হয়, কয়েক দশক লেগেছিল এই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে।
12 Apostles (যীশু খ্রিষ্ট্রের ১২ শিষের নামে তৈরী) – ১২ টি বিশাল দেহি পাহাড়র সাগরের মাঝ তটে ঠাই দাড়িয়ে রয়েছে এই জায়গাটিতে।
The Otways – এটা প্রাকৃতিক একটি বনাঞ্চল, বিশেষ লতাগুল্ম সহ এমন কিছু গাছ আগে যা শুধুমাত্র এই জায়গাটিতেই দেখা যায়। বেশিরভাগ সময় অন্ধকার থাকে, পাখির আওয়াজ, এক গাছের উপর অন্যগাছের জন্ম। ফিতার মত গাছের ঝাড়, সব সময় হালকা বৃষ্টি আর ঠান্ডা আবহাওয়া নিয়ে এলাকাটা একটু ভুতুড়ে দেখায়। কেউ একা যেতে বললে নিস্বন্ধেহে ঐ জায়গায় আমি অন্তত যাবনা।
পথেই একটা নেচারেল পার্ক আছে, ওয়াইর্ড লাইফ বলে অনেকে, যেখান থেকে ক্যাংগারু কে খুব কাছ থেকেই দেখা যায়। ভাবতেই ভাল লাগে প্রাণীগুলো ৫ গজের মধ্যেই হাটা চলা করছে কোন ভয় ভীতি ছাড়া। বাংলাদেশে এই রকম খোলা থাকলে প্রতিদিন তাদের নিধন যজ্ঞ শুরু হয়ে যেত।
একটি জায়গাতে তো পাখিগুলো রীতিমত মানুষের গায়ে এসে বসছিল। আমি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমার কাছে আসছে না কেন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ফিরতে যাব ঠিক তখন একটা একটা করে ৬-৭টা তোতা পাখি আমার ঘাড়ে এসে বসল। তাদের কাঁদে রেখেই ছবি উঠলাম। দারুন ব্যাপার; একটাও ভয় পাচ্ছিলনা। এত স্বাধীন পাখি, প্রাণীগুলো ভাবতেই অসাধারণ লাগছিল।
যখন ফিরছিলাম বেলা প্রায় ৬টা, শহরে পৌঁছাতে রাত ৯টা। প্রাঞ্জল অপেক্ষা করছিল, ফোন করতেই পৌঁছাল হোটেলের কাছে, আজ রাতের খাবারটা একসাথে বাইরে খাব বলে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। হাটতে শুরু করলাম আবার, পছন্দ মত খাবার পাওয়া যাবে সেই আশা ত্যাগ করেছি। রাস্তার বেশির ভাগ দোকান বন্ধ, ভুতুড়ে অবস্থা হতে ২ ঘন্টা বাকী। তবুও রাস্তায় মানুষ হাটছে, ট্রাম চলছে। হাটতে হাটতে Crown Casino ভেতরে ঢুকে পড়লাম; সেখাই একটি রেষ্টুরেন্টে রাতের খাবার খেলাম। বিদায় দিলাম, বিদায় নিলাম প্রাঞ্জলের কাছ থেকে। কাল একদিন আছি, বিকেলের দিকে ফিরব সিডনিতে।
প্রাঞ্জলের ২ দিনের বাজে অভিজ্ঞতা আছে, যতবার গ্রেট ওশেন রোড ট্রিপে গিয়েছে ততবারই তাকে বৃষ্টি পেয়ে বসেছে। আমি সেই ক্ষেত্রে আবারও বলতে পারি ভাগ্যবান, বৃষ্টি হয়েছে তখন যখন আমরা ক্যাসিনোতে খাচ্ছিলাম রাতে।
বেলা ১০টা ঘুম থেকে উঠলাম, গোসল করে ব্যাগগুলো লাগেজ রুমে রেখে হালকা হয়ে বার হলাম। নিচে এসে খেলাম। হাটলাম অনেকদুর, প্রায় ১০ কিলোমিটারের কম না। খুব বাথরুম পেল, হাতের কাছে কোথাও সুবিধা জনক জায়গা পাচ্ছিলামনা। সামনে একটা কফি সপে ঢুকেই জানতে চাইলাম, কোথাই ওয়াশ রুম পাব। সে তার নিজের দোকানের বাথ্ রুমের চাবি দিল। খুব ভাল ব্যাবহার পেলাম ছেলেটার কাছ থেকে। কোন প্রত্যাশা ছাড়া সেবা অভাবনীয়। বাথরুমটা দেখে মনে হল প্রাইভেট এবং খুব সুন্দর পরিপাটি।
বের হয়ে কফি অডার করলাম, কিছুক্ষণ ছিলাম, গল্প করলাম, ফিরলাম প্রায় বিকাল তিনটার দিকে। ৪টার দিকে খেলাম মেগডোনান্ডে। ব্যাগ সহ রাস্তায় নামলাম, ফিরব এয়াপোর্টে। ট্রাম ধরে বাস ষ্টেশনে, অপেক্ষা করলাম ৩০ মিনিট। বাসে ফিরলাম ৪৫ মিনিট রাস্তায় চলে। রাতেই ফ্লাই বেক করলাম সিডনিতে তখন রাত ১০টায়। ভাইয়া ফোন করেছেন বেশ ক’বার। এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেনে চেপে Central এ পৌঁছালাম, Central থেকে ট্রেন বদলে Wiley Park ষ্ট্রেশন পৌঁছাতে রাত ১১ টা। বাইরে খুব হালকা বৃষ্টি, ষ্টেশন থেকে বের হতেই ভাইয়া গাড়ি নিয়ে হাজির। বাসাই পৌঁছালাম ৫ মিনিটেই। কাল দুপুর ১২টাই ফ্লাইট সিঙ্গাপুরের কানেক্টিং। ইচ্ছা আছে আর একটা দিন সিঙ্গাপুরে কাটাবো।
সকাল ৭ টা ঘুম ভাঙ্গল, ভাইয়ার আজ ছুটি, সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ রসুই ঘরে গেলাম, আমার লেবানিজ ডিসটা নাস্তার জন্য তৈরী শুরু করছিলাম। ভাবী হাত লাগালেন, ২০ মিনিটে খাবার রেডি। খেলাম গোসল করে রেডি হলাম। পরিবারের সবাই মিলে আমাকে এয়ারপোর্ট ড্রপ করে দিলেন। যথা সময়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করে ফ্লাইটে চাপলাম, ৯ ঘন্টার লম্বা সফর, ২ টা ইন্টারনেট এর ৩/৩ ঘন্টার প্যাকেজ শেষ করলাম। সন্ধ্যা ৭টা সিঙ্গাপুর সময়, টেক্সি যোগে হোটেল পৌঁছাতে ম্যাসেনঞ্জারে অফিস এডমিন নক করল। জানতে চাইল কখন ফিরব, সকালের একটা টেনডার সাবমিশন, আমায় দেখে দিতে হবে। হোটেলে ফিরেই কাতার এয়ারওয়েজকে ফোন দিলাম, জানালাম আমি ফ্লাইট বদলাতে চাই। কাছাকাছি সময়ের কোন একটি ফ্লাইট দিতে, মহিলা দারুন সহযোগীতা করলেন। রাত দুইটার ফ্লাইট ব্যবস্থা করেদিলেন ৩০০ দেরহামের বিনিময়ে।
গোসল করেই হোটেল চেক আউট করলাম। রাস্তায় দাড়াতে ট্রেক্সি ক্যাপ হাজির, জানালাম হাতে সময় খুব কম, আমাকে ধ্রুত এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে হবে। একটা ব্যস্ত সড়কে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ভয়ংকর ভাবে আমায় প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্ট পৌছে দিল। প্রথমে ভাবতাম সময়ের সল্পতায় আমার মত বাজে ড্রাইভার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, কিন্তু এই ড্রাইভার সেই ধারণায় ছেদ দিল। দুবাই পৌঁছালাম সকাল ৮:৩০। ফারুক ভাই অপেক্ষায় ছিলেন, ফিরলাম অফিসে। দারুন ক্লান্ত, মেয়েটা অপেক্ষা করছে। দ্রুত কাজ শেষে দুপুর ২টায় বাসায় ফিরলাম বড় এক পুতুল আর চকলেট নিয়ে।