Italy
১ম অক্টোবর ২০১৫ - Ljubljana, Slovenia -তে শেষ দিন, Venice, Italy – তে আমাদের প্রথম দিন।
গতকাল রাতের ক্লান্তি এবং অসুস্থতায় ভাল ঘুম হয়েছে। সকালের স্বাভাবিক প্রাতরাস সেরে নিচে গেলাম। এর মাঝখানটায় বড় ব্যাগটা বাসে উঠিয়ে দিয়ে আসলাম। আজ-কাল আমার আর খারাপ লাগে না ইউরোপীয়ান খাবার খেতে, অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন সুন্দর করে প্লেইটাও সাজাতে জানি। আজ একটা বড় মগে করে দুই দফা কফি খেলাম। গতকালের লেখাটা লিখা হয়নি। বকেয়া কাজের মত লাগছিল। মাঝখানে বন্ধুর খোঁচা। ভাবছিলাম লেখাটা কিভাবে শেষ করব। কারলী (আমাদের গাইড) থেকে জানতে চাইলাম ঠিক কতক্ষণ লাগবে আমাদের ভিনেস পৌঁছুতে? সে জানাল আড়াই থেকে তিন ঘন্টা, সিদ্ধান্ত নিলাম এই সময়টাকে কাজে লাগানো যাক। ল্যাপটপটা ফুল চারজ করা ছিল। গাড়িতে উঠা মাত্রই যথা সম্ভব সামনের দিকের সিটগুলোর একটা নেওয়ার চেষ্ঠা করলাম। বেগ পেতে হয়নি অবশ্যা, পেয়ে গেলাম পছন্দ মত জায়গা। চলন্ত গাড়ির সামনের দিকে ঝাকুনি একটু কম হয়, এই সুবিধাটা না নিলে, ল্যাপটপে টাইপ করাটা সহজ হবেনা জানতাম।
আমি লেখা শুরু করলাম। রাস্তায় একটা ছোট্ট বিরতী ছিল। ভিনেস প্রায় ২৫ মিনিটের দূরত্বে থাকতেই লেখা এবং ছবি এডিং শেষ করে, মোবাইলটা ইটালির নেটওয়াকের সাথে সংযোগ করালাম (রোমিং)। তার পর ওয়াইফাই একটিভ করে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ দিলাম ইন্টারনেটের। ল্যাপটপের ব্যাটারি এখনো ১৫% বাকী। পোষ্টা শেষ করতে করতে ব্যাটারীর ক্ষমতা প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। আমার ল্যাপটপটি প্রায় ৩ বছর আগে কেনা (Accer Ultra book)। যখন কিনেছিলাম দামটা একটু বেশিই পড়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তেমন কোন বিরক্তি দেয় নায়, মাঝ খানে ২ গিগা র্যাম বাড়িয়ে ছিলাম একবার। এখনো ৩ ঘন্টা ব্যাটারীর ক্ষমতায় চলে।
১০:৩০মিনিটে আমরা ভিনেস পৌঁছাই। হোটেলে চেক ইনের সুযোগ পাইনি। কারণ চেক ইন হচ্ছে বেলা ২টায়। আমাদের সবার ব্যাগ একটা ষ্টোরে রাখলাম, হোটেল লোকেশনটা চিনেই বের হব। আজ আমাদের নিজেদের একাকী ঘুরতে হবে। অর্ধেকটা অবশ্যা আমাদের গাইড সহযোগীতা করবে। ইটালীতে বাইরের গাইডের অনুমুতি নাই। তাছাড়া পুরো টিম নিয়ে ভিনেস একসাথে ঘুরার কোন সুযোগ হবেনা। কেন সেটা একটু পর বলছি।
ট্যুার গাইড আমাদের নিয়ে বাস স্টপে গেল; সাথে ফিরতী টিকেটের ক্রেডট দিয়ে দিল টিকেটে। গাইড আমাদের সাথে নিয়ে ভিনেস বাসে ষ্ট্রেন্ডে পৌঁছাল। চলন্ত বাসে একটা বাজে কান্ড ঘটে গেল। আমাদের সাথে থাকা এক চাইনিজ মেয়ের হাত ব্যাগ থেকে টাকার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। আমি অবশ্যা ছেলেটাকে আঁচ করতে পেরেছিলাম। একটি ছেলে কালো নিগ্রো বাসের এক প্রান্ত থেকে অন্যা পান্তে একটু নিজেকে ভীরের মধ্যে টেনে হিচঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমার গাঁয়ে লাগা মাত্রাই; অশালীন একটা চাহুনী দিলাম। আমার কাছ থেকে সরে গেল, মনে হচ্ছিল এই ছেলেটা পকেট মার। মনের কথা বাইরে এনে তো কোন লাভ হবেনা যতক্ষণ কোন প্রমাণ পাওয়া যাবেনা। আমার সামনে কোন প্রমান ছিলনা, যখন প্রমান পেলাম তখন বাস ছেড়ে ছেলেটা চলে গেছে। অনেকটা চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে টাইপের।
বাস ষ্ট্রেন্ড থেকে হেঁটে গন্ডলার দিকে গেলাম। হোয়াট দ্যা হ্যাল এই গ্যান্ডলা। ওকে ব্যাবস্ বলছি। আমাদের দেশের রাঙ্গামাটি-কাপ্তায়ে নদী ভ্রমনের জন্য যে নৌকাগুলো থাকে, সেগুলোর মত, একটু বেশী সুন্দর করে সং করানো। আমাদের দেশের মাছিদের মতোই হাতে বৈঠা আছে। ব্যাটাদের হ্যাব্ভী এটিটিউট। প্রতিটি গ্যান্ডলা ১২০ ইউরোতে ভাড়া করা হয়, শহরের মধ্যে যে বড়সড় নালাগুলো আছে সেগুলোর মধ্যে চালাই শহর টাকে দেখাবে এই শুধু তার কাজ এবং সময় বেঁধে ৩০ মিনিট। আমরা ৬জন এক গ্যান্ডেলাতে, প্রতিজন ২০ ইউরোতে। আমাদের নৌকায় থাকা এক বাঙ্গালী মহিলা মাঝিকে জিজ্ঞাসা করল, এখানে কতটা গন্ডেলা আছে? সে উল্টা প্রশ্ন করল; তোমাদের শহরে কতটা গাড়ী আছে? বাঙ্গালী মহিলাটা বলল এটা বলা সম্ভব নয়, সেও বলল এইটাও বলা সম্ভব নয়, কতটা আছে কেউ জানে না। আমি অবশ্যা গুগল থেকে খুঁজে বের করে ওনাকে জানিয়েছি তৎক্ষনাথ, ততক্ষনে উনার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ ঘুরতে আসে আনন্দের জন্য, কিন্তু কিছু বড় মাপের বেয়াদবের জন্য অনেক সময় ঘোরাঘুরির মজাটা মাটি হয়ে যায়।
দুইশত বছর আগে ভিনেস এ ১০ হাজারের উপর গন্ডেলা ছিল, কারণ এই গুলোই চলাচলের মধ্যোম হিসাবে ব্যাবহার করা হত। আজ ৫০০শতাধিক গন্ডেলা ট্যুরিজমের জন্য ব্যবহার করা হয়। একটি গন্ডেলার দাম ২০ হাজার ইউরোর কাছাকাছি, এবং ১০ বছর ব্যবহার যোগ্য থাকে এক একটি। কিন্তু মজার বিষয় ৩-৫ মাসের মধ্যে গন্ডেলার সমস্ত খরচ উঠে যায়। এক একজন প্রতিদিন কমপক্ষে ১,২০০ ইউরো ইনকাম করে মাসে প্রায় ২৮ হাজার ইউরো। ইনকামটেক্স ২৫% শতাংশ, ব্যাবস্থাপনা ১০%, ট্যুরিজম টেক্স ১০% বাদ দিলে প্রতি বছর এক-একটি গন্ডেলার ইনকাম এক লাখ, চুরাশি হাজার আটশত ইউরো। ভেবে দেখুন একজন গন্ডেলার চালকের ইনকাম কত? আর তাদের আচরণ খারাপ না হয়ে উপাই কি? তবে ট্যুরিষ্ট এরিয়াতে গন্ডেলা চালানোর পারমিট নিতে যে পরিমান ঝক্কি নিতে হয় তা খুব কঠিন। একটি গন্ডেলার পারমিটের জন্য প্রায় ২-৩ বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাদের পারমিটের পরিসীমা আছে। তাই সরকার চাইলেও বেশি গন্ডেলা চালানোর অনুমুতি দিতে পারে না।
আমি গন্ডেলাগুলো ছোট ছোট নালাতে চলে, এই কথা বলেছিলাম। তার কারণ আছে। ভিনেস এখন পানীর ৬-৭ মিটার নিচে আছে। আগে যেখানে বছরে নয় বার বন্যা হত এখন হয় ৯০ বার, আগামী একশত বছরের মধ্যে ভিনেসকে যে আর ভাল কোন অবস্থায় দেখা যাবে তার কোন সম্ভাবনা দেখছিনা। বন্যার সময় সব ব্যবহারিক জীনিস পত্র উপরে উঠিয়ে রাখা হয়। পানি নামার পর আবার নিচে নামানো হয়। ভিনেসের সব বিন্ডিংগুলো হাজার বছরের পুরোনো। কোন বিল্ডিংকে মেরামত করতে দেখা যাচ্ছেনা। যা আছে তাতেই চলছে। ইটালিয়ান সরকার বা জনগন ভিনেসের ভবিষ্যত বুঝতে পারছে। ভিনেস একটি দ্বীপের মত জায়গা, বাংলাদেশে পানি উঠলে চট্টগ্রাম, ঢাকার কলোনীগুলোতে যেমন নৌকার ব্যাবহার করতে দেখা যায় ঠিক তেমনটি। সেন্ট্রাল ভিনেসকে পানি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এক পারের সাথে অন্য পাড়ের সর্ম্পক কতগুলো ছোট ছোট কালভাট দিয়ে। ভিনেসের নদীর পানিগুলো খুব ময়লা দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল দুষণ শুরু হয়ে গেছে। পানীর রং গাড় হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
গ্যান্ডেলা ভ্রমনের পর ক্ষুদা লাগল, এখন খেতে হবে। আমাদের ট্যুর গাইড সাথে নিয়ে গেল এক সস্তা হোটেলে। যেখানে ৫ ইউরোতে পাওয়া যাবে, বড় এক স্লাইস অরজিনাল পিজা, এক বতল পানীয় এবং একটা আইসক্রীম। ইটালীর পিজার অনেক নাম, পিজার উৎপত্তি স্থল এখানেই। সবাই পিৎজা মুখে দিয়েই ওয়াও বলছিল। আমি মনে মনে ভাব ছিলাম বাপের জন্মে কখনো এইগুলা পিৎজা খাই নায় এরা। দুবাইতে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন কর্মসূত্রে পিৎজা খাওয়া হয়। আমাদের দুবাই অফিসের নিচে যাতারওজাত (লেবানিজ নাম), লেবানিজ একটি দোকান আছে। খাবার দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৩গুন বেশি আদায় করে তারা। কারণ আছে; লোকেশনটা অনেক বেশি দামি। বছরে অনেক বেশি তাদের রেষ্টুরেন্টের ভাড়া গুনতে হয়। ঐ রেষ্টুরেন্টের পিৎজার কাছে এইটা কিছুইনা। হ্যাঁ এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, অরজিনাল পিৎজা বলতে যদি বুঝায় তখনকার দিনের বানানো পিৎজা এই যুক্তিটা আমি গ্রহণ করব। দুনিয়াতে পৃথিবীর সেরা পিৎজা বললে কখনই গ্রহন করবো না। খাওয়া শেষ করলাম এবং ট্যুর গাইডের পিছু নিলাম। গাইড আমাদের San Marco বিল্ডিংয়ের সামনে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল, গাইডের পেছন পেছন গলির ভিতর সান মার্কোতে যেতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রথমত এক বিন্ডিংয়ের সাথে অন্য বিল্ডিংয়ের দূরত্ব ২ মিটারেরও কম প্রশস্তে। দ্বীতিয়ত একজন আরেক জনের সাথে গায়ে গাঁ লাগিয়ে যাচ্ছিল অনেকটা। চট্টগ্রামে রেজউদ্দিন বাজারের ভেতরের দোকানগুলোতে যারা গিয়েছেন তারা বুঝবেন আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি। এই গলি তার চেয়েও সরু, মাঝে মাঝে একজন যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে।
একটা মজার কথা বলি। সান মার স্কয়ারের সামনে ট্যুর আমাদের বলল, যে যার যার মত ঘুরতে। অনেক বড় জায়গা হলেও এত মানুষের ভিড়ে একটা টিম হয়ে দেখার সুযোগ হবে না। দেখলাম কি পরিমান মানুষ সান মার্কো স্কয়ারে, যাচ্ছে তা মানুষ। ট্যূরের ৪জন সদস্য ঠিক করলাম একসাথে থাকব এবং জায়গাটা ঘুরে দেখব। শুধু ৫ মিনিটের ব্যবধানে দেখলাম আমার পাশের ৩জন গায়েব। সামনে, পেছনে, ডানে এবং বামে প্রায় ১০ মিটার জায়গা ধরে খুঁজেছি কারো পাইলামনা। শেষে নিজে নিজে ঘুরা শুরু করলাম। সকালে একটু ঠান্ডা থাকায় একটা মোটা কাপড় পড়ে বের হয়েছিলাম। বেলা যখন ২টা ছাড়ল তখন হাপাই উঠলাম। একটা দোকান খোঁজ করছিলাম যেখানে হালকা কাপড় পাওয়া যায়। পেয়েও গেলাম ১টা হাফ প্যান্ড এবং ৩টা গেঞ্জি ৫০ ইউরোতে কিনে নিলাম এবং ওখানেই কাপড় বদলানোর কাজটা শেষ করলাম। এখন একটু আরাম লাগছে, একটা পলো টি-শার্ট এবং হাফ পেন্ট পরে আবার ঘোরাঘুরি শুরু। আমাদের গাইডের কথা কাজে লাগল। টিমতো দুরের কথা, সাথে একটা বন্ধুকে নিয়ে যে একসাথে ঘুরতে পারব সেই সুযোগ ছিলনা।
প্রায় ৮ কিলোমিটার হাটলাম, খুব ক্লান্ত লাগছিল। একাডেমিয়া বিজ্রের পাশে এসে এক বাঙ্গালীকে ডেকে জানতে চাইলাম পিৎজা রোমা কোন দিকে। পিৎজা রোমা হচ্ছে বাসষ্টেশন। আমাকে একটা শর্টকাট দেখাই দিল তাতে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসষ্টেন্ডে পাশে চলে এলাম। একটা ছোট রেষ্টুরেন্টে বসে ৪টা পানীয় অর্ডার দিলাম, না আমার সাথে অন্য কেউ ছিলনা। আমি একাই ৪টা পানীয় শেষ করেছি। সাথে একটা সামুদ্রীক মাছের ভাজি খেয়ে ২২ ইউরো গুনে দিয়ে পূনরায় বাসে উঠার জন্য প্রতিক্ষা করছিলাম।
ভিনাসে অনেকগুলো বাঙ্গালীকে দেখলাম, বেশির ভাগ বাঙ্গালী রাস্তায় চাইনিজ খেলনা বিক্রি করছে। সারা দিনে কতটাকাই বা বিক্রি করতে পারে। সব অবৈধ অবিভাসী। কিছু এসেছে লিবিয়া থেকে সমুদ্র পথে, কেউ দুবাই থেকে বিজনেস ট্যুরে, গিয়ে ফিরে আসে নায়। আরো অনেক অবৈধ পথ আছে, ঐদিকে আর গেলাম না। কিন্তু কেন? আমাদের যতটুকু আছে, করে খেতে পারলে বাকী ৫ পুরুষ বসে খেতে পারবে। আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের, সরকারের তথা জনগনের মানষিক বিকাশ দরকার। এক একটা চেহেরা দেখলেই ওদের মনের অবস্থা পড়া যায়। এখানকার কৃষ্ণাঙ্গরা চোরা চালানী কারবারের সাথে যুক্ত, রাস্তায় দামী হাত ঘড়ি এবং ল্যাদার ব্যাগ সস্তায় বিক্রি করছিল।
আমাদের ট্যুর গাইড বলছিল, ইটালী নাকি মাফিয়াদের আড্ডা খানা। ছায়াছবিতে আমরা মাফিয়াদের যেভাবে দেখি তা নাকি তাদের দুনিয়ার ৫০ শতাংশ অবস্থান দেখানো হয় মাত্র। ওরা বিশ্বের অর্থনীতির চাকা খুব কম সময়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিতে পারে। তাদেরও কিছু নিয়ম-কানুন আছে, তাই বাইরের দুনিয়ার আইনী অনুসংগে তাদের অবস্থান নিচে। মাফিয়ারা ইটালীর বড় একটা অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। আমি অবশ্য এর বেশি কিছু জানতে চাইনি। জানার ইচ্ছা ছিলনা। ভবিষ্যতে কখনো নতুন কিছু জানলে, জেনে রাখা ভাল টাইপের জানবো।
বাসে চড়ে বসলাম ৬:৩০মিনিটের দিকে। ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের হোটেলের কাছাকাছি একটা জায়গায় নামাই দিল। আবার হাটা শুরু করলাম। অর্ধ কিলোমিটার পর হোটেলে দেখা পাইলাম। মেজাজ সেই খারাপ, গরম পড়ছিল। যেই হেটেলের সিঁড়িতে পাড়া দিলাম অমনি বৃষ্টি শুরু হল। আমার সাথে ছাতা ছিল, কি অপরাধ হত আমি রাস্তায় থাকা অবস্থায় বৃষ্টি হলে? হোটেল অভ্যর্থনা থেকে রুমের চাবিটা নিলাম। এই হোটেলটার মান ৪ তারকা হলেও, সেবা ৫ তারকার কাছাকাছি। রুম এবং বাথ রুমে ঢুকে মন ভাল হয়ে গেল। শৌচালয় সেরে, বাথ টেবে গরম পানিতে গা ভাসিয়ে দিলাম ২০ মিনিট। সারা দিনের ক্লান্তি চলে গেল।
২য় অগাষ্ট ২০১৫ - Florence, Italy আমাদের আজ দ্বীতিয় দিন।
একই সময় প্রাতরাস সেরে, বের হলাম নতুন শহরের উদ্দেশ্য। গন্তব্য ইটালীর ফ্লোরেন্স আমাদের নতুন শহর। গতকালের ক্লান্তিকে জয় করতে পারলেও আজকে ক্লান্তিকে জয় করার সামর্থে আসিনি শরীর। আজকের দিনটা বিভিন্ন কারণেও স্বরণ থাকবে, বিভিন্ন ঘটনা স্বরণ রাখতে বাধ্য করবে।
ইটালীতে এখন গড় গরম ৩০-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোদের ছটা চোখ অন্ধ করে দেওয়ার মত। দুবাইতে এর চাইতে বেশি গরম হয়, কিন্তু বেশিক্ষণ খোলা জায়গায় থাকতে হয়না বলে গরম অনুভুত হয়না। হলেও কিছু সময়ের জন্য। গত সপ্তাহে ইটালীতে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি গরম পড়েছে। সবাই বলছিল আমরাই ভাগবান এক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরের টেমপারিচার প্রায় ১০ ডিগ্রি নেমে এসেছে। ফ্লোরেন্স শহরেরও একই অবস্থা প্রায় সময় বন্যা হয়। শতাধিক বৎসর আগেও ইটালীর ফ্লোরেন্স, ইংল্যান্ডের চেয়ে ধনী ছিল, বিভিন্ন সময় তারা ইউরোপীয়ান দেশগুলোকে ঋণ দিত। তাই তাদের অনেক গৌরব দেশ এবং শহরকে নিয়ে। ইটালির মত দেশের ভবিষৎ এমন হবে কেউ হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। ইটালী একসময় ক্ষমতা দখলের দ্বম্বে পৃথিবী মাতিয়েছে। বড় বড় প্রাসাধ বানিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চাইলেও আজ থেকে পরের ১০০ বছর পর ইটালীর বেশির ভাগ জায়গার চিহ্ন পাওয়া যাবেনা; পানীর নিচে তলিয়ে যাবে। ফ্লোরেন্সে নতুন কোন বিল্ডিং দেখলাম না। এখানকার দালানগুলো খাটি পাথরে বানানো শত শত বছরের পুরোনো। ইটালির নতুন প্রজন্মকে অনেকটা মিশুক মনে হল। পুরোনো বয়স্ক লোকগুলো বেশিরভাগক্ষেত্রেই অহঙ্কারী, অধিকাংশ তো ইংরেজীর ধারে পাশেও যায়না। ইটালীর সরকারী কর্মকর্তারা রেকর্ড পরিমান চোর এটা সবাই বলে; বুঝতে পারছিনা, আমাদের দেশের চেয়েও বেশি কিনা।
ইটালির ইতিহাসের দিকে আমার আলোকপাত নাই। ইতিহাসে এমনিতে আমি অনেক কাঁচা। আমাদের দেশের যে পরিমান ইতিহাস আছে তার হয়তঃ দশ শতাংশ জানার সুযোগ হয়নি, অথবা জানার চেষ্টা করিনি।। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত সামাজিক বিজ্ঞানে যতটুকু ইতিহাস শেখা তার মধ্যেই আমার দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞ্যানের সীমাবদ্ধ। এসব দেশে ঘুরতে আসার পর নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়ছে।
ফ্লোরেন্স-এ এলাম বেলা ১১:৩০ মিনিটের দিকে। যাত্রার শেষ প্রান্তে পাহাড়ের উপর এমন একটা অংশ আছে যেখান থেকে পুরো ফ্লোরেন্সকে দেখা যায়। কেউ কি আমার গ্রুপে নেপাল গিয়েছেন? যদি গিয়ে থাকেন, সেখানে একটা বুদ্ধ মন্দির আছে, পাহাড়ের চুড়ায়। ঐখান থেকে পুরো কাঠমুন্ড দেখা যায় অনেকটা ফ্লোরেন্সের মত। ফ্লোরেন্সকে উপর থেকে দেখে বুঝার উপায় নাই এই শহরটির ভেতরের অবস্থা এই রকম খারাপ। আমরা আজ লোকাল ইটালিয়ান ট্যুর গাইডের সাথে ফ্লোরেন্সের পথে প্রান্তে ঘুরব। সময় বেঁধে ৫ ঘন্টা, সত্যা বলতে পাঁচ ঘন্টা গরমের মধ্যে ঘুরতে যাওয়া রীতিমত কঠিন একটি কাজ।
Houseful ভারতীয় চলচিত্র, কারো মনে আছে। সেখানে একটা ইটালিয়ান ক্যারেকটার আছে। পুরো ফিল্মে “মামা মিয়া, আইএম জোওওওকিং”ডায়ালগটি বলে। প্রথম যখন আমি ঐ ইটালিয়ান চরিত্র দেখেছিলাম তখন ইউনিক মনে করেছিলাম, ভাবছিলাম মানুষ কিভাবে একটা চরিত্র এভাবে তৈরী করতে পারে। কিন্তু মজার বিষয় এইটাই ইটালীয় ভাষার টান । খুব মজা লাগছিল যখন আমাদের গাইড লেডি ইংরেজীতে তার দেশের সম্পর্কে বলছিল। আমি কোন ইতিহাস ঠিক মত শুনতে পাইনি। আমি তার কথা বলার একসেন্ট এর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর মনে মনে মজা নিচ্ছিলাম। তার একটা ডায়ালগ এখানে ইংরেজীতে লিখছি। “You know we Italian are veeerry rich, we had enough moneeeey to feedeeeing the riches mossst countryeee tooodayiii. I ammm teeelinng you.” কথাগুলো অনেক মজার ছিল। যারা আমার লেখা বুঝতে পারছেন না। তাদের ঐ ফিল্মটি দেখার অনুরোধ রইল। যারা দেখেছেন তারা জানেন কি মজার চরিত্র হাউসফুল এর ই্টালিয়ানের। এইটার দুইটা সিরিজ এসেছে, প্রথমটাই সবচাইতে ভাল ছিল। ঐ ছবিতে অক্ষয় কুমার, অর্জুন রাম পাল ও অভিনয় করেছেন।
মহিলাটা আমাদের বেশ কয়েটি জায়গা ঘুরে দেখাল হেঁটে, প্রায় ২ ঘন্টা মত। অতঃপর আমরা আমাদের মত আলাদা হয়ে গেলাম। আজকের ম্যানুতে যা দেখলাম- Piazza Duomo, Condotta, Ponte Vecchio Bridge, Piazza de’ Pitti, Piazza S. M Nuova & Piiazza S. Croce। অনেক ছবি উঠালাম, বিভিন্ন ইতিহাস বলছিলেন আমাদের গাইড, তেমন ইন্টারেষ্টিং কিছু পেলামনা যেটা লিখতে পারি। মজার অনেক কিছুই হয়ত ছিল, হয়ত উনি বলেননি অথবা আমরা উনার কথা বুঝে উঠতে পারিনা। শুধু উনাকে দোষ দিলে চলবে না। গরমে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, যার কারণে ঘুরাঘুরি মজা নিতে পারছিলামনা। আমি মনে মনে একটি জায়গা খুঁজছিলাম, যেখানে একটু এসির বাতাস পাওয়া যাবে। পাওয়া গেল, H&M ব্রান্ডের একটি দোকান, যেখানে মানুষের উপচে পড়া ভীড়, তার মানে এই নয় সবাই পোষাক কিনতে এই দোকানে ভীড় জমিয়েছে। তারা একটু ঠান্ডা হওয়ার জন্য ঐ দোকানে ঢুকেছে। নাহ্ ভাল লাগছেনা এই জায়গাটা, পছন্দ হলনা।
এবার একটি রেষ্টুরেন্ট খুঁজছি যেখানে বসে খাওয়া যাবে সাথে একটু ঠান্ডাতে জিরানো যাবে। মানি নট এ ফ্যাক্ট নাও, যেখানে যান নিয়ে টানা টানি। একটা গলির মধ্যে গেলাম, একটি ইংরেজী ভাষী ই্টালিয়ান এর থেকে জানতে চাইলাম এই রকম একটি জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে। সে আমাকে একটি ছোট দোকান দেখাই দিল। খুব পরিপাটি, ২ তলা নিচে গেলাম, খুব সুন্দর ঠান্ডা। শরীরের গরমে থাকা যখমগুলো ভরতে শুরু করেছে। এক স্মার্ট ইটালিয়ান ছেলে খাবার অর্ডার নিতে আসল। জানতে চাইলাম লোকাল ক্রজিন কি আছে। বিশাল একটা লিষ্ট ধরাই দিয়ে চলে যাওয়ার মতলব থাকলেও, তাকে বসালাম এবং আমাকে সহযোগীতা করতে বাধ্য করলাম, যেটা আমাকে সঠিক খাবার বেছে দিতে সহযোগীতা করেছে।
ইটালির বেশিরভাগ বাড়ির নিচে ২-৩ তলা তৈরী করা, উপর থেকে বোঝার উপাই নাই।
এক গ্লাস রেড ওযাইন, রুটি, মাংসের বড় টুকরা আধা সেদ্ধ সাথে ঝোল ওদের মতে করে রান্না করা, আলু ভাজি ইটালিয়ান ষ্ট্যাইলে, এক বোতল পানি। ইটালিতে সবচেয়ে বেশি খাবারের দাম, গতকালও আমি বেশ টাকা খুইয়েছি। কিছু করার নাই খাবার লোভ সামলাতে না পারলে যা হয়। যারা রেড ওয়াইনকে মদ বা নেশা মনে করেন তাদের জ্ঞ্যাতার্থে, এটি একটি ফলের রসে তৈরী পানীয়। দৈর্ঘ্য দিন রেখে দেওয়ার কারণে ১-৩ শতাংশ এলকহলের সৃষ্টি হয়। ৭-৯ শতাংশ এলকহোল মানুষের ক্ষতি করেনা। তাই এইটিকে শুধু শরীরের শক্তি যোগানো পানীয় হিসাবে ব্যবহার যায়। তবে সেক্ষেত্রে নিশ্চিত হতে হবে, ওয়াইনটি অরজিনাল এবং কোন ফ্লেবার আছে কিতায়। অরজিনাল ওয়াইনে কোন ফ্লেবার হয়না। বিল নিয়ে আসল, ৩২ ইউরো, খেতে ভালই লেগেছে, কিন্তু টাকা খোয়াতে কষ্ট লাগছিল। একটু বের হলাম ছোট খাট কিছু গিফট কিনব বলে। এসে আবার গরম। সামনে আইস ক্রিম খেতে দেখলাম চলন্ত জীবগুলোকে, আমারও আইসক্রিম চাই। বড়সড় একটা বিস্কিট মোড়ানো ৪ ফ্লেবারের আইসক্রিম, চকলেট ক্যাক সহ ৮ ইউরোতে দফা করলাম। হাটছিলাম মা’য়ের জন্য একটা ছোট চামড়ার ব্যাগ কিনব বলে। হতাস হলাম, সব চোর এখানেই বসে আছে। কিছু ব্যাগ চামড়ার যা প্রয়োজনের চেয়ে বড়। যেগুলো পছন্দ হচ্ছিল বা যেগুলো নেওয়ার মত সুন্দর সেগুলো সব ২ নাম্বার চামড়া, কিছুতো শুধু মাত্র প্লাসটিক দিয়ে মোড়ানো। রীতিমত ঝগড়া শুরু করে দেলাম, যখন বলি এটি অরজিনাল লেদার না। চোরের মায়ের বড় গলা। আমাকে চামড়া চেনাতে হবেনা। চামড়ার যেকোন কিছুতে একটা দাগ টানলেই বোঝা যাবে চামড়া কিনা। কারণ চামড়াতে দাগ আঁকলেও তা হাতদিয়ে মুছে দিলে গায়েব হয়ে যাবে। আমি কয়েক বার চ্যালেঞ্জ করলাম, কিন্তু তাদের ঝগড়ার ষ্ট্যাইল দেখে উল্টো পথে হাঁটা দিলাম।
সামনেই একটা লোক কাটুন আঁকছিল। নিজেকে কাটুনে দেখার ইচ্ছে ছিল। ৫ ইউরোতে নিজের একটা কাটুন পোট্রেট বানাতে দিলাম। আর্টিষ্ট একটি কাটুনতো বানাইছে, তবে মনে হচ্ছিলনা আমার চেহারার সাথে মিল আছে। তাই আপনাদের সমীপে গতকাল কার্টুনের ছবিটি দেখার জন্য দিলাম। অনেকে আমায় জিজ্ঞাসা করছিল এইটা কে? আমার পরিচয় আমাকেই দিতে হয়েছিল। বললাম আমি এইটা, কার্টুনে। কেন চেনা যাচ্ছে না? অনেকে অবশ্য খুশি করার জন্য বলেছে হ্যা আমার মতই দেখতে। হা হা হা... তার মানে সবাই চাই আমি খুশি থাকি।
এই ট্রিপে আমার ক্রেডিট কার্ডের হিসাব অনুযায়ী শুধু ৩৫৫ ইউরো খরচ হয়ে গেছে খাবারে। আরো ২টা দেশে যেতে হবে ৫০০ ইউরো ছাড়াই যাবে খাবারের ক্ষেত্রে। সাধারণত ১০০ ইউরো অনেক লিষ্টের বাইরে খেতে গেলে। রাস্তায় অনেক দোকান পাওয়া যায়, যেখানে খাওয়া ৫ ইউরোর মধ্যে। যদি লোকাল ক্রজিন চেকে দেখার ইচ্ছা থাকে সেক্ষেত্রে টাকা খোয়াতেই হবে। আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল লোকাল ক্রজিনগুলোর টেষ্ট নিব। ওজন ট্যুরে যোগ দেওয়ার পর ৬ কেজি বেড়ে গেছে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে। সব জিনসগুলো সেইরকম টাইট হচ্ছে। বেল্ড-এর নক ঘরের চামড়া উঠে যাচ্ছে। দুবাই যাওয়া পর্যন্ত টিকলেই তাতেই আমি খুশি। বেলা ৩:২০ মত সময়ে আমাদের ডাক পড়ল মিটিং পয়েন্টে। মিটিং পয়েন্ট থেকে আমাদের বাস পর্যন্ত হেটে যেতে সময় লাগবে ১৫-২০ মিনিট, তাও রোদের মধ্যে। মেজাজ কি পরিমান খারপ হচ্ছিল কাউরে বোঝাইতে পারতেছিনা। গ্রুপে সবার অবস্থা একই রকম। আমার মনে হয় একটু বেশি, স্ক্রীন পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছিলতো। গ্ল্যামার চলে গেলে কি হবে আমার, সেই চিন্তাই অস্থির হচ্ছিলাম। আই কিডিং ম্যান... তবে একবারও যে কথাগুলো মনে আসছিলনা তা কিন্তু নয়। হা হা হা... খারাপ লাগছিল কারণ আমি গরমে হাটলেই দুই কান ব্যাথা করে, শরীরের প্রেসার ঘাড়ে চলে আসে এবং কাঁধ থেকে কান পর্যন্ত ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। আমরা সবাই ঘেমে একাকার যখন বাসের কাছে পৌঁছালাম তখন মোটামুটি একটা ঘেমে গোসল সারানো হয়ে গেছে। কিছু টিস্যু ধার করে মুখ, হাত, পা আরো ভিতরের জায়গাগুলো মুছলাম। তারপর বাসের এসিতে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। মিনিট ৪৫ পর আমরা Montecatini-তে এসে পৌঁছালাম। গাড়ি থেকে নেমেই যা দেখলাম সেটা আরেকধাপ মন খারাপ করার মত। আমাদের ট্যুর গাইডও রেগে গেছে; এই হোটেলগুলো দেখে। সব হোটেল ৪ তারকা, কিন্তু হাজার বছরের পুরোনো দালান। তারকা কাকে বলে আমার মনে হয় এরা জীবনেও দেখেনি। বিল্ডিং পুরোনো হলেও সমস্যা নাই, কিন্তু একটা দালানও ঠিক মত মেরামত করা হয়নি। আমরা যেখানে চেকইন করার কথা ছিল তাদের অবস্থা মোটামুটি একটু ভাল, যেই আমরা চেক ইন করব সেই ৫ টা রুম কম, তাড়াহুড়া করে পাশের হোটেলে স্থানান্তরীত করল ১০জন সদস্যকে, আমি অধমও এই টিমের সদস্য। শৌচালয় পরিস্কার হলেও বেশির ভাগ পানির কল কাজ করেনা। রুমের ভেতরকার অবস্থা বললামনা, মন খারাপ হয়ে যাবে মনে করা শুরু করলে। সব চেয়ে কষ্টের ব্যাপার ছিল এসিটি ঠিক মত কাজ না করায়। গতরাত ১টা পর্যন্ত ঘেমেছি।
অনেকগুলো ময়লা কাপড় জড়ো করা আছে ধুতে দিতে হবে। সব একজায়গায় করে গেলাম লোকাল স্লেফ সার্ভিসে। যেখানে মেশিনে কাপড় ধোঁবে কিন্তু তোমাকে ১:১৫ মিনিট দাঁড়াই থাকতে হবে। ইংরেজী ভাষা দখলে থাকলেও কাল মোটামুটি যথেষ্ট এলোমেল পরিবেশের সৃষ্টি করেছি। সব কাপড় নিয়ে মেশিনের সামনে দাড়াঁলাম। ইনফরমেশন বোর্ডে ইটালিয়াল লেখা, নিচে ছোট করে ইংরেজীতে লেখা। Focus হারালে যাই হয়। ওখানে ব্যাংক নোট, পয়সা এমনকি ক্রেডিট কার্ড সবকিছু গ্রহণ করে। আমি খেয়াল না করেই দৌড়াচ্ছি কয়েনের জন্য, ধারণা করেছিলাম আমাকে পয়সা দিয়েই কাজ সারতে হবে। তেমন কেউ ছিলনা যে জিজ্ঞাসা করবো। অনেক দৌড় ঝাপ করে ১০ ইউরো কয়েন জোগাড় করলাম। একটি এক ইউরো কয়েন দিয়ে চাপ দিলাম পাওডারের জন্য। ৪.৫ ইউরোতে কাপড় ওয়াসে দিয়ে ৩০ মিনিটে জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার সামনে একটা ইটালিয়ান ফ্যামিলি ১০ ইউরোর একটি নোট যখন আমার সামনে মেশিনে ঢুকাচ্ছিল তখন আমার আক্কেল জায়গা মত আসল। লেখা পড়ে নিশ্চয় হাসছেন... কামঅন ই্ট ইজ নট ফ্যানি এনি মোর... আমি কিন্তু নিজেই নিজের উপর ক্ষেপে গেছি। কাপড় ধুয়ে নেওয়ার পর ড্রাই-শুকানোর মেশিনে দিলাম আর ৪ ইউরো সাথে ৩০মিনিট ষ্ট্যান্ড ম্যানের ভুমিকা। এখন আমার যথেষ্ট কয়েন আছে, টাকার নোটের দিকে আর মনোনিবেশ করলামনা। আবার ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হল।
এত সমস্যার মধ্যেও একটি হাসির ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের গ্রুপে দুইজন সাউথ আফ্রিকান আছে। একজন মহিলা বয়স ৬০ এর কাছাকাছি, একজন পুরুষ সম বয়সী এবং তারা দুজনই একই দেশে একই অফিসে কাজ করেন দীর্ঘদিন। ওরা একজন আরেকজনের সাথে কাজ করেন অফিসে, লিভ টুগেদারও করেন। ইটালীর ভিনাসে অনেক জুটি ছোট ছোট ব্রিজের (কালভার্ট আমাদের দেশের) উপর চুমুর ফুলঝুড়ি ঝুলাচ্ছিল। সেই ফাঁকে ঐ বুড়ো আমাদের সেই বুড়িকে প্রপোজ করল বিয়ে করার জন্য। তাও এমনিতে নয়, হাটু গেড়ে রিং অফার করে তারপর। আই ডোন্ড নো হোয়াট দ্যা হ্যাল ইট ইজ্। লিভটুগেদারের উপর আছে অনেক দিন, কেউ কাউকে ভালবেসে বিয়ে করবে এই কথাটা বলতে পারছিলনা। ইটালির ভিনেসে এসে এই অর্কমটি না করলে কি তাদের চলত না? যাই হোক, আমাদের ট্যুর গাইড আবার ফলাও করে কোচের ভিতর সেই দুঃসংবাদটি জানালো। আমরা অবশ্য তাদের অনুরোধ করেছিলাম কিভাবে এই আকামটা করতে পারছেন তা খুলে বলার। তাহারা সব সুন্দর করে আমাদের সবিস্তারে বলিল। কি আমাকে সফিসটেকেট মনে হচ্ছে। হু কেয়ারস্ ম্যান, এত গরম লাগছিল, সব ভালখবর তিতা মনে হচ্ছিল। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলাম, ওনারা যা করেছেন ভালই করেছেন। মানুষের বয়স হলে অনেক একা হয়ে যায়। এই একাকীত্বটা জয় করার এত সুন্দর একটা সুযোগ হাত ছাড়া না করে কাজে লাগিয়েছেন তাতেই ভাল লাগছে এখন। কে কি বলল তাতে কি এসে যায়, ইভেন হু দ্যা হ্যাল আই এম টু থিংক ডারটি এবাউট দ্যাম।
বুড়ো-বুড়ির অবশ্য ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর খরচ বেঁচে গেল। এই বয়সে যাই কিছু করুক বেশি দাম দিয়ে কনডম কিনতে হবে না। বাই দা ওয়ে আমাদের দেশে কনডম সরকার ফ্রি দেয়, ওদের দেশে সাধারণ কন্ডমের দাম কিন্তু অনেক। সরকার ফ্রি দেয় মানে এই না; ফ্রি আসে কনডম গুলো, এগুলো সরকার কিনে তারপর ফ্রি বিতরণ করে অথবা দাতা সংস্থাগুলো কিনে সরকারকে দেয় জনগণের হাতে দেওয়ার জন্য। কনডমের কথা এমনিতেই আমি বলছি সেটা চিন্তা করলে ভুল হবে। কারণতো একটা অবশ্যই আছে। কি বলুনতো-
কনডম ইনভেন্টেড বাই ইটালী। তারমানে এই হল কনডমের উদ্ভাবক এই ইটালী। পি... মজা লাইগছে তাইনা? মনে মনে কইবার লাগছিলেন লেনিন বেদ্দব হইয়া গেছে। একটুতো ছোট বেলা থেইক্যাই আছি। তয় এখন দরকার ছাড়া বেদ্দবী করিনা এই আরকি? হা হা হা... কিডিং
অপেক্ষার পালা শেষ, তৃষ্ণা লেগেছে প্রচন্ড। কাপড়গুলো সুন্দর করে ভাঁজ করে হোটেলের দিকে দৌড়ালাম। গোসল করলাম, ঘাম থেকে মুক্তি পেলেও গরম থেকে মুক্তি পাচ্ছিলাম না। রাত্রের খাবারের সময় ৭:৩০মিনিট, লোকাল ক্রজিন, তার উপর আলাদা ২০ ইউরো দিয়েছি। কোন ভাবেই মিস করা যাবে না। গেলাম; তারপর আবার সেই বিরাট খাবার ষ্টোরী ২ ঘন্টার। রুমে ফিরলাম, সাথে ওয়াইফাই ইন্টারনেট পাসওয়ার্ড নিয়ে। কিন্তু বদের ইন্টারনেট রুমের ভেতর কাজ করছিলনা। কয়েকবার হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও, তারা এসে ঘুরে গেলে, আর ফলাফল শুণ্য। ক্লান্ত শ্রান্ত ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ আর লেখার শক্তি হচ্ছেনা।