London
২২ জুলাই ২০১৫ আমার প্রথম দিন লন্ডনে - খুব বেশি ঘুরে দেখা হয়নি।
২৩ জুলাই ২০১৫ আজ London Eye এর বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখা হয়েছে। ৮-৯ বছর পর সাইকেল চালানো হল।
জি.সি.সি’র সব শহরে যত সুযোগ সুবিধা দিকনা কেন লন্ডন শহরের ১০০ শত ভাগের ২০ ভাগ সুবিধা দিতে পারছেনা, পারবেও না। দুইশত বছরের ইতিহাস, সাথে আছে আধুনিক টেকনলজি। শহরের বেশির ভাগ অংশে পাতাল রেইল সহ অন্যান্য পাবলিক ট্রাসপোর্টেশন ব্যবস্থা আছে।
আবহাওয়া দারুণ. ১৮-১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাস আছে পর্যাপ্ত। পুরোনো শহর হলেও যথেষ্ট পরিস্কার। পুলিশ হাতে গোনা চোখে পড়েছে।
রাস্তায় সারি করে সাইকেল রাখা আছে। সাইকেল চালানোর অবশ্য একটা কারণ আছে। এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন এ সাইকেল যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক কোন ব্যক্তি ৩-৫ মাইল পথ হেটে চলতে হবে, সেক্ষেত্রে সাইকেল ব্যবহার করলে গন্তব্যে পৌঁছতে সহজ হয়। প্রথম ৩০ মিনিটের জন্য কোন টাকা দিতে হয়না, তাই ৩-৫ মাইল ৩০ মিনিটের মধ্যে পাড়ি দেওয়াটা সহজ বিনা পয়সাতে। ৩০মিনিটের পর ২৪ ঘন্টা পর্যান্ত ২ পাউন্ড ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যেমে পরিশোধ করতে হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা যেখান থেকে আপনি সাইকেল নিবেন ঠিক সেখানে আপনাকে ফেরতৎ দিতে হবেনা। শহরের মধ্যে শত শত সাইকেল পার্কিং ষ্টেশন আছে। আপনি চাইলেই যেকোন টিতে জমা করতে পারেন। আজ প্রায় ঘন্টা খানিক সাইকেল চালাইয়ে বুঝলাম শরীরের কি পরিমান ওজন বাড়ছে।
এই শহরের বাসস্থান এবং খাবারের মূল্য সাধারণের তুলনায় অনেক বেশি। খাবারের মান যথেষ্ঠ ভাল। আজ সকালে ডোনার খেলাম, দুবাইতে যে ডোনার পাওয়াযায় সেই ডোনারের তুলনাই ৩ গুন বেশি স্বাধ, গন্ধ। বিকেলে ফিস এবং চিপসে গেলাম, খাবারের স্বাধ এখনো মুখে লেগে আছে। পানীয় এর দাম খুব কম শুধু এলকোহল। কোক, ফানটার দাম ৫গুন বেশি দুবাইয়ের সাথে তুলনা করলে।
সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয়- বাংলাদেশে আমরা এখন ৫-১০ টাকা পকেটের কোনায় ফেলে রাখি, প্রয়োজন পড়ে না। রিক্সাওলা থেকে শুরু করে চায়ের দাম ৫ টাকা মূল্যে মানের উপরে যাওয়ার কারণে ১-৫ টাকার প্রথা এখন অনেকটা অপ্রোয়জনীয়, পয়সার কথা ছেড়েই দিলাম। দুবাইতে ৫০ ফিলস্ খুব একটা ব্যবহার হয়না। কখন করেছিলাম মনের পড়ছেনা। লন্ডনে এখনো ৫ পয়সার ব্যবহার আছে। এসেই অনেকগুলো কয়েন পকেটে জমা হল। কোনটা কোন কয়েন এখনো বুঝতে সময় লাগছে। কয়েনে লেখাগুলো অনেক ছোট করে লেখা, তাই পড়তে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ইদানিং চশমার পাওয়ার -০.৭৫ পৌঁছাইছে। দাদু ভাই হলে যা হয়, চশমা সাথে না এনে বিপদে আছি। ছোট লেখা পড়তে পারছিনা। মাঝে মাঝে বিদেশিনির সহযোগীতা লাগছে।
কিছু নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হল। সবাই অনেক মজার। গতকাল ২টা অষ্ট্রেলিয়ান এর সাথে বেশ কিছু সময় পার করলাম। ওরা জানতে চাইল আমি কি ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করছি কিনা? আমি বললাম না। আমি ডাটা কিনে নিয়েছি। ওরা বলছিল, ডাটার অনেক দাম এইখানে। আমি কথা বাড়ালাম না। কিছু সময় পরে, পাব’এ (বারে-এলকহল) ডাক পড়ল আমার। তাদের ডাকে সাড়া দিলাম। আমি খুব একটা এলকহল নিতে পারিনা, আমার পেট সহ্য করেনা, বমি হয়ে যায়। একটা বিয়ার আনালাম আমার জন্য। তাদের জন্যও আনানো হল। আমি একটা শেষ করতে করতেই ওরা প্রায় ৩-৪টা শেষ করে ফেলল। আমি অবাক হলাম, যারা কিনা ডাটা কিনতে চায়না খরচের আশংকায় তারা প্রায় ২০-২৫ পাউন্ড বিয়ারের বিল দিল প্রতি জনে। এই জিনিসটা আমার ভাল লাগেনি। ব্যপারটা অপচয় মনে হল। তার অবশ্য কারণও আছে। এমন না যে তারা শুধু আজ রাতেই এতগুলো এলকহল নিল। তাদের কথা অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় সম-পরিমাণ এলকহল ওরা নেয়।
লন্ডনে টুরিজম বাড়ার বড় একটা বড় কারণ আমি মনের করছি, দিন আর রাতের সময়ের ব্যবধান। সাধারণত আমাদের দেশে ১২ ঘন্টা দিন ১২ ঘন্টা রাত। মাঝে মাঝে ঘন্টা খানেরকের ব্যবধান হয়, বিভিন্ন ঋতুর কারণে। এখানে ১৬ ঘন্টা দিন ৮ ঘন্টা রাত। সবাই কাজ শেষে ফিরার পর অনের সময় হাতে পায়, তাছাড়া এদেশে অতিথিরা দিনের সুবিধা নিতে পারে ঘুরা ঘুরির জন্য। এখানকার বেশির ভাগ মানুষ কাজ শেষে বাড়ি ফিরার পথে পাব’স এ হেঙ্গআউট করে, খাবার খায় তারপর বাড়ি যায়। এখানের কালচারের একটা বড় অংশ এই ইউরোপীয় পব’স। তাদের পরিবারের সময়গুলো পব’স বসে কাটায়। গলিতে গলিতে পব’স। অনেকটা কফি হাউজের আড্ডা।
আজ লন্ডন আই-তে যাব। লন্ডন আইয়ে ডুকতে বিশাল লাইন পেরুতে হয়। প্রায় ঘন্টা খানিক তো লাগেই ভিড় ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে। সেখানে দুই বুড়ো বুড়িকে দেখলাম ৬০-৬৫ বছরের মধ্যে বয়স, সাথে ছোট ছোট দুটো মেয়ে বয়স যথাক্রমে ৮ এবং ৫ এর মধ্যে দুজনের। মনে হচ্ছিল একবার তারা দাদা-দিদি আবার মনে হচ্ছিল বাবা-মা। কিছুক্ষণ তাদের উপর দৃষ্টি রাখতেই বুঝলাম তারা দাদু-দিদি। মেয়ে দুইটা অনেক মজা করছিল তাদের দাদু-দিদি ভাইদের সাথে। জানিনা, আমাদের প্রজন্মকে আমরা কি উপহার দিতে পারবো?
আমার এক বন্ধুর অনুরোধে এই লেখাটা লিখলাম। আমি বাংলাই লিখিনা খুব একটা, লিখতে পারিনা ভাষার বিড়ম্বনা তেরী হয়। গুছিয়ে লিখতে অনেক কষ্ট হয়, বাংলা ভাষায় লিখার অভ্যাস না থাকাটা দারুণ কষ্টের। ইংরেজীর লেখার ভাবের সাথে বাংলা লেখার ভাবের যথেষ্ট ব্যবধান আছে। ভাবছি মাঝে মাঝে লিখব, জড়তা কমাতে হবে।
দোস্ত তোর কথা রাখলাম।
২৪ জুলাই ২০১৫ - লন্ডনে দ্বীতিয় দিন-
সকাল ৬:৩০ মিঃ ঘুম ভাঙ্গল, পা থেকে কোমর পর্যন্ত ব্যাথা। বুঝতে পারলাম গতকালের সাইকেল চালানোতেই এই ব্যাথার প্রদূরভাব এবং ২-৩ কিঃ হেটে পথ চলার প্রতিশোধ নিচ্ছে শরীর। গতরাতেই ব্যাথা করছিল, কিন্তু কেন জানি ঔষধ নিতে ইচ্ছে করে নাই। বার বার ভুল করি, ভাবি সেরে যাবে ব্যাথা। ঘুম থেকে উঠেই স্নান করলাম, বেরুলাম সকালের নাস্তার জন্য। রুমের ভাড়ার সাথে সকালের নাস্তাটা এখানটাই ফ্রি পাওয়া যায়। নাস্তা করতে করতে ভাবছিলাম; আমি আজ রাতে কোথাই থাকবো সেটাই ঠিক করা হয়নি। আমি ২টা ট্যুর অপারেটর এর সাথে আমার ট্যুর প্লেন করেছি, যাতে সময়গুলো ঠিক মত ব্যবহার করা যায়। কাল আমরা ন্যাদারল্যান্ড যাব। নাস্তাটা ছিল ইংলিশ ব্রেকফাষ্ট, আমার অপছন্দের খাবার।
লন্ডনে হোটেল ভাড়ার জন্য বিভিন্ন ওয়েব-এ গিয়ে দেখলাম। ওয়েবের অফার অনুযায়ী প্রতিরাতের জন্য আমাকে কম করে হলেও ৯৯ পাউন্ড গুনতে হবে; দেখে মেজাজ সেই খারাপ। আমার ট্যুর অপারেটরকে ফোন দিলাম, তারা আমাকে ৯৯ পাউন্ডের রুম ৩৫ পাউন্ডে বুক করে দিল। কামঅন, সোজা ৬৬% ডিসকাউন্ট। কিভাবে করল আমি জানিনা, তবে ভালবোধ করছিলাম। গতরাত্রে যেরুমে ছিলাম, একই রুম আর ছাড়তে হলনা। একরুম থেকে অন্যরুমে যেতে ব্যাগ গোছাতে হবে, সেটাই বিরক্তিকর।
দুইদিনের কাপড় অপরিস্কার, একটা লন্ড্রি খুঁজে বার করলাম; কাপড় ড্রাই ক্লিনিং এর জন্য। দেখলাম বাঙ্গালী, কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝলাম ছেলেটা এইখানে পার্ট টাইমে কাজ করছে। কোন একটা ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ (মার্কিটিং) এ শেষ বর্ষের ছাত্র। আমাকে ছাড় দিল যতটুকু তার সাধ্যে ছিল। সকাল সকাল বৃষ্টি শুরু, কেউ একজন আমাকে অনেক দিন আগে বলেছিল, লন্ডনের আবহাওয়াকে বিশ্বাস করতে নেই। আজ ব্যাপাটা তাই ঘটল। সারাদিন বৃষ্টি, বৃষ্টির মধ্যে কথা বলার লোক পেয়ে গেলাম। ছেলেটাকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলাম ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? সোজা বলল, জানিনা, তবে খুব একটা ভাবছিনা কাজ নিয়ে। কিছু ভাল একটা নিশ্চয় করা যাবে। ছেলেটার কনফিন্ডেন্ট দেখে মুগ্ধ হলাম। জানতে চাইলাম কিভাবে? বলছিল আমরা পড়া লেখার পাশাপাশি চাকুরী নিয়েছি বিভিন্ন কোম্পানীতে। কাজ করেছি বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন পরিবেশে, কাজ আমাদের যে অভিজ্ঞতা দিয়েছে তা দিয়ে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় চলারমত চাকুরী জুটে যাবে। বাংলাদেশে পড়ালেখা করা বন্ধুরা পাশ করার পর তাদের চাকুরীতে বেগ পেতে হয় কারণ তাদের কোন অভিজ্ঞতা থাকেনা। হয়ত অনেকের কাজের প্রতি আগ্রহ থাকে না। আমাদের বাধ্যবাধকতা আছে পড়ালেখার পাশাপাশি যেকোন ধরণের কাজ করতে হবেই। ছেলেটার কথাগুলো ভাল লাগছিল, কারণ এই দৃষ্টিকোনটা আমার সাথে মিলে গেছে পুরোপুরি। আমরা দেশে যেটুকু পড়ালেখা করি তা বিশ্বমানের তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কাজের অভিজ্ঞতা বলতে কিছুই আমাদের নেই। যেটা একটা ভাবনার বিষয় হয়ে দাড়াঁয় পড়ালেখা শেষ করার পর।
সারাদিনে শুধু্ দুটো জায়গায় গেলাম। পায়ের ব্যাথার কারণে সাবধানে চলাফেরা করতে হয়েছে, তার উপর বৃষ্টি। অনেকদিন পর বৃষ্টি পেলাম, তাই স্বাভাবিক ভাবে বিরক্ত হওয়ার কথা থাকলেও বিরক্ত লাগছিলনা। একটা ছাতা কিনে নিলাম ৪.৯৯ পাউন্ডে, সহজে বহনযোগ্য। বৃটিশ মিউজিয়াম এবং Madame Tussauds ছিল আজকের ঘোরাঘুরির তালিকায়। আর হালকা কিছু কিনা কাটা করলাম।
বৃটিশ মিউজিয়াম- বৃটিশদের কালচার, বিজ্ঞান, প্রকাশনা এসবকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। আমি খুব সামান্য সময় ছিলাম। মিউজিয়ামে আমার তেমন আগ্রহ নাই। জায়গাটা আমার পথ চলার কাছেই ছিল তাই একবার ঢু মেরে দেখলাম।
Madame Tussauds – চলচিত্রের নায়ক নায়িকাদের শারীরিক ডায়ামেনশনে বানানো মুর্তির কালেকশন। প্রায় ২ ঘন্টা বৃষ্টির মধ্যে লাইনে দাড়াঁয়ে টিকেট কেনার সুযোগ পেলাম। এখানে একটা মজার ব্যপার ঘটল। আমি যখন টিকেট কাউন্ডারের খুবই কাছে, তখন এক ইন্ডিয়ান জুটি, বয়স প্রায় ২৩-২৫ এর মধ্যে হবে, কাছে এসে আমাদের সাথে সেই খেজুরে আলাপ জুড়ে দিল। আমি মানা করছিলামনা, উদ্দেশ্য বুঝতে পারছিলাম। আমার সামনে এবং পেছনে রাশিয়ান পরিবারে লাইনে দাড়াঁনো। ইন্ডিয়ান জুটি’টির উদ্দেশ্য তাদের বোঝানো তারা আমার বন্ধু, তারাও অনেক্ষন লাইনে দাড়িয়ে আছে। আমিও বাঁধসাধী নাই। দুজনই সুযোগ নিল ঠিকই, পরে আমি তাদের বললাম- তোমরা অন্যায় করেছ, তা কি বুঝতে পেরেছ? তারা চুপচাপ ছিল। বললাম তোমরা তোমাদের কাছেই ছোট হও নাই আমি একজন বাঙ্গালী আমার কাছেও ছোট হয়েছ মানষিকভাবে। কাজটা ভালকরনি, হঠাৎ করে লাইনে ভাবজমিয়ে ঢুকে পড়েছ। মানুষকে এত স্টুপিড মনে করনা। সেই পালাল আমার সামনে থেকে, আর চোখে পড়েনি।
আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টে অনেকেই বিমানে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ান। একটা জীনিস বিমানের কেউ পছন্দ করেননা এবং সবাই আমার সাথে একমত হবেন এ বিষয় নিয়ে। তা হল বিমানের শৌচাগার। বিট্রিশদের কোন একটা কিছু আমার অপছন্দের তালিকাই থাকলে এই বিষয়টি প্রথমেই স্থান পাবে। শৌচাগারে কাজ শেষে পানি ব্যবহারের করার পরিবর্তে টিস্যু ব্যবহারের কারণ আমি জানিনা। কেউ জানলে আমাকে জানাবেন। আমি এই অযৌক্তিক বিষয়টি নিয়ে মানষিক এবং শারীরিক কষ্টে আছি। লন্ডনের পাবলিক শৌচাগার, হোটেল রুমের শৌচাগার সবগুলোর অবস্থা একই রকম। কোথাও পানি নেই। তাই যতবার বড় কাজে ব্যস্ত হই, ততবার স্নান করা লাগছে। নিজেকে কেন জানি অপরিস্কার মনে হচ্ছে। কি এমন ক্ষতি বাথট্যবের পাশে একটা পানির পাইপ জুড়ে দিলে।
আজকে ২টা বাঙ্গালী মেয়ের সাথে পরিচয় হল, পাতাল-রেল ব্যবহার করার সময়। আমি প্রথমে পাকিস্তানি মনে করেছিলাম, পরে দেখলাম বাঙ্গালী। মেয়ে দুটি মুসলিম পরিবারের, এখানেই জন্ম এবং বেড়ে উঠা। একটা পথ ভুল করেছিলাম তাই তাদের সহযোগীতা নিচ্ছিলাম জুবলি লাইন ব্যবহার জানতে। লন্ডনের একটা জিনিস চমৎকার, যে যেমনটি খুশি তাদের ধর্মের স্বাধীনতা পাচ্ছে। কেউ কারো চলা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছেনা। মেয়ে দুটো বোরকা পড়ে ছিল, জিনস্ এর সাথে ছোট বোরকা, মাথাটা পুরো ঢাকা। চেহেরাটা দেখা যাচ্ছিল শুধু। জানতে চাইলাম কেমন আছে তারা, তাদের উত্তর এত সাবলীল শুনতে অনেক ভাল লাগল। আমরা ভাল আছি, আমাদের মতই। জানতে চাইলাম, এই দেশে যেভাবে মেয়েরা পোশাক পড়ে তোমরা ব্যতিক্রম কেন? তোমাদের কোন সমস্যা হয়না? সোজা উত্তর – কে কোন পথ, কৃষ্টি অবলম্বন করবে তা সরকারের সিদ্ধান্ত নয়, নিজের সিদ্ধান্ত। আমরা আমাদের কৃষ্টি পছন্দ করি, আমাদের মতই থাকছি। সরকার সবার স্বাধীনতা ব্যাপারে তদারকী করেন। একই জায়গায় খোলামেলা যেমন মানুষ থাকছে তেমনি পুরোপুরি ঢেকেও চলছে। লন্ডন একটা ট্যুরিষ্ট জোন হয়েও তাতে কোন সমস্যা হচ্ছেনা।
কক্সবাজার এ ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করার জন্য আমি বেশ কিছু বন্ধু এবং পরিচিত জনের সাথে কথা বলেছি। সবাই একটা কথা বলে কক্সবাজারে যথেষ্ঠ হোটেল আছে, আছে দৈর্ঘ্য সমুদ্র। আর্ন্তজাতীক এয়ারপোর্টের সুবিধা নাই, পব’স বা বার নাই, নাই ডান্স ক্লাব। এগুলো ছাড়া, পূর্ণ ট্যুরিজম চালানো সম্ভব নয়। এখন আর্ন্তজাতীক বিমান বন্দর হচ্ছে, বাকীগুলো কখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে। আমি জানতে চাইলাম কেন, পব’স বা বার খোলা তো কোন ব্যাপার না। জানতে পারলাম কক্সবাজারের বিভিন্ন সম্প্রদায় এলকহল বার, ডান্সবার গুলো চালাতে দিচ্ছেনা। এক কথায় স্বাধীনতা নাই্। কেন? সবার ধারণা পরিবেশ খারাপ হয়ে যাবে, ধর্মীয়ভাবে এসব নিষিদ্ধ তাই এসব চালাতে দিতে দেয়া হবেনা। আমার কিছু বলার নাই এক্ষেত্রে। কারণ একটা মানুষ তার ধর্মের অনুসাশন কিভাবে মানবে সেটা সম্পুন্ন নিজের বিষয়। একে অনের কাজের বাঁধা দিবে, সেইটা কেন এখনো মাথায় কাজ করছেনা, তাও আবার ধর্মের নামে। দুবাই একটি পুরোপুরি মুসলিম প্রশাসনিক শহর, এখানের সব আছে। সরকার সহযোগীতা করছে। এখন ব্যাপার হচ্ছে ভাল-খারাপের মাধ্যে মানুষ কোনটাকে বেছে নেবে সেটা মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। মেয়ে দুটো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সংস্কৃতি ও ধর্মের নামে তৈরী প্রতিবন্ধবধকতা কখনো স্বাধীনতা বা ধার্মিকতা দিতে পারেনা। যদি প্রতিটা মানুষ একে অন্যকে সম্মান করতে জানে তবেই স্বাধীনতার পুরো স্বাধ নেয়া সম্ভব।
আজকে যদিও সবকিছু ভালভাবেই কাটল, তবুও মনটা একটু খারাপ। আমার মেয়েটা অসুস্থ, ঠান্ডা কাশি ছাড়ছেনা। পাপা, পাপা করছে।
কালকের জন্য প্রস্তুতি চলছে।